দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুইদিন বাকি। শেষ মুহুর্তে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে মরিয়া হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা। এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আ’লীগ নেতা বর্তমান সাংসদ ঈগল প্রতীকের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও শেষ মুহুর্তে অনেকটা এগিয়ে উঠেছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আফসার আলী।
এদিকে নিজেদের পক্ষে সাধারণ জনগণের সমর্থন জানান দিতে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি আজ বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকালে শহরে পৃথক জনসভার আহবান করেছেন। শহরের তালতলাস্থ সরকারি বালক বিদ্যালয়ের মাঠে লাঙ্গল প্রতীকের আশরাফুজ্জামান আশুর ও শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে অনুষ্ঠিত হবে মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র ঈগল প্রতীকের জনসভা। বুধবার বিকালে শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাইকিং করে এই জনসভার কথা জানানো হয়।
ঘোষণায় জানানো হয়, আশরাফুজ্জামান আশুর পক্ষে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় উপস্থিত থাকবেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রত্যাহারকৃত প্রার্থী ও যুগ্ম-সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু, যুগ্ম সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিমুন শামস, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, সদস্য এসএম শওকত হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী, জেলা যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমান, বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগ জেলা শাখার সভাপতি মাহমুদ আলী সুমন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান জুয়েল, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশিসহ জেলা আ’লীগের প্রভাবশালী নেতারা।
এছাড়াও জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার জনসভায় উপস্থিত থাকবেন। জেলা আ’লীগের উল্লেখিত নেতারাসহ সদরের বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানরা, মেম্বাররা লাঙ্গল প্রতীকে সমর্থন জানিয়ে আশুকে বিজয়ী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছেন।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র পক্ষে পৌর আ’লীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা মহিলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জোছনা আরা, বিভিন্ন ই্উনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ জনসভায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভারী হচ্ছে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশুর পাল্লা। ক্লিন ইমেজের এই নেতার পক্ষে একে একে একাত্ম হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-জাতীয় পাটিসহ সমাজের নানা পেশার নেতৃবৃন্দ। ফলে আশু এই আসনে ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে পারেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর গেল দুই সপ্তাহে হেভিওয়েট প্রার্থীদের চেয়ে নেতৃবৃন্দের সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত জেলা জাতীয় পার্টির প্রার্থী আশু। তার প্রতীক লাঙ্গলের পক্ষে প্রতিদিনই সদরের বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রতিনিধিরা যুক্ত হচ্ছেন। হাজারো জনতা তার গণসংযোগ ও নির্বাচনি সভায় অংশ নিচ্ছেন।
আশুর সঙ্গে জাতীয় পাটির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নৌকার প্রার্থী না থাকায় তারা সমর্থন দিচ্ছেন আশুকে। তুলে ধরছেন এমপি হিসেবে আশুকে কেন প্রয়োজন। লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন ভোটারদের।
এদিকে পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তিনিও পাল্লা দিয়ে প্রায় সমানতালে প্রচার প্রাচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চেষ্টা করছেন নিজের দলীয় লোকজনদের কাছে টানার। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে অসমাপ্ত কাজ শেষ করার পাশাপাশি দিচ্ছেন নতুন অশ্বাস। আ’লীগের একটি অংশ তার পক্ষে কাজ করছেন। আছেন আইনজীবীদের একটি অংশসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। বেশ কিছু মহিলারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন নৌকার পরিবর্তে এখানে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আ’লীগের লোক। তাকে ভোট দিলে আরও বেশি উন্নয়ন হবে।
অপরদিকে স্বতন্ত্র হিসেবে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আফসার আলী প্রকাশ্যে কোন দলীয় সমর্থন না পেলেও এক ঝাক তরুণকে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরা সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ওয়ার্ড পাড়া মহাল্লায় ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সাধারণ ভোটারদের একাংশের মন জয় করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন বলে বিভিন্ন এলাকায় শোনা যাচ্ছে। যেখানে দলীয় প্রার্থীদের অফিস নেই সেখানেও তার অফিস এবং অফিস ঘিরে ভীড় লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন হেভিওয়েট প্রার্থী পিছে ফেলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার চলে আসার উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে তার।
তবে, সাধারণ ভোটাররা বলছেন, জাতীয় পাটির শতভাগ ভোট, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ ভোট এবং স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই লাঙ্গলের প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় এবং ক্লিন ইমেজ ও সমাজসেবক হিসেবে সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকায় আশু পিছিয়ে দিয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থীদেরকে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৬০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ২১৭ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৩৯১ জন। এখানে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি। এই আসনে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার বেশী।
খুলনা গেজেট/এনএম