সাতক্ষীরায় ১২০ টাকায় আবেদন করে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছে ৬৭ জন নারী-পুররুষ। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তানরা ঘুষ ছাড়াই মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশের চাকরি পেয়ে বেজায় খুশি। তারা পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। ৫ হাজার ৪৯ জন নারী-পুরুষ পুলিশ কনস্টেবল পদে এই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রার্থীরা প্রথমে ডাক্তারি ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্পসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরপর তিন দিনের এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২২৭ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।
পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত জাকিয়া সুলতানা জানান, তার বাবা একজন কৃষক। তারা দুই ভাইবোন পুলিশ কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছে। কোন টাকা ছাড়াই সম্পূর্ন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করায় তিনি কার্তপক্ষকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
দিনমজুরের ছেলে সামছুজ্জামানও নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কৃষকের মেয়ে সাজু চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জানান, দেশসেবাই তার একমাত্র কাজ হবে। কোন দালালের মাধ্যমে না গিয়ে টাকা ছাড়াই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে গরিবের জন্য কাজ করতে চায় তারা।
চা দোকানির মেয়ে খুরশিদা খাতুন টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না জেনেও লাইনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চাকরি পেয়ে আনান্দে কেঁদে ফেলেন। মাত্র ১২০ টাকায় যে সরকারি চাকরি হয় তিনি নিজে তার সাক্ষী। এসময় তার পাশে দাঁড়ানো বাবা বারবার চোখের পানি মুছতে থাকেন।
খুরশিদা পুলিশ সুপারসহ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনাকারি কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানায়, ঘুষ ছাড়া যে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায়, দেশের পুলিশ দপ্তর তা প্রমাণ করেছে। আর ঘুষ ছাড়া মেয়ে চাকরি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান বাবা।
বাবা ছেড়ে চলে গেছে আর মা রাইস মিলে (চালকল) শ্রমিকের কাজ করে পড়শোনা শিখিয়েছে মেয়ে সুপ্রিয়া দাসকে। নিজ যোগ্যতায় বিনা টাকায় চাকরি পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন মা-মেয়ে। লোকের বাড়িতে কাজ করে লেখাপড়া শিখিয়ে ১২০ টাকায় চাকরি পাওয়ায় খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন দরিদ্র মা।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান নিয়োগ পাওয়া কনস্টেবলদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা পেশাদারত্বের সঙ্গে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট পুলিশ হওয়ারও উপদেশ দেন তিনি।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবারের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সাতক্ষীরা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটাসহ ৫৫ জন ছেলে ও ১২ জন মেয়ে মিলে মোট ৬৭ জন চূড়ান্তভাবে নিয়োাগ পেয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড