খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২

সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলা : অ্যাটর্নি জেনারেলের মতবিনিময়

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে কলারোয়ায় তার গাড়িবহরে হামলার মামলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অবহিতকরণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাত ৮টায় সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর।

সাতক্ষীরা পাবলিক প্রসিকিউটর আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃরধা ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. মোহাম্মদ হোসেন।

মতবিনিময়কালে এসএম মুনীর বলেন, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী আ’লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপতালে ভর্তি কলারোয়া উপজেলার হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় ফিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আ’লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতাকর্মী আহত হয়।

এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উলে­খ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচারক এমআই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যে বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

নিম্ন আদালতে বাদির পক্ষে রায় না হওয়ায় ২০০৪ সালের ৪ আগষ্ট বাদি এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারকদ্বয় ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দিলে পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উলে­খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। টির ১৫১/১৫ মামলাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই এ মামলায় বাদি সাক্ষী দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিল।

মামলায় বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেমউদ্দিনসহ নয়জন সাক্ষ্য দেন। তবে বাদিকে জেরা করেনি আসামীপক্ষ। ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগষ্ট আসামীপক্ষ মামলা তিনটির কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত করেন। দীর্ঘ তিন বছর পর উভয়পক্ষের শুনানীর পর আসামী পক্ষের মিসকেস খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট ওই মামলাগুলি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি গত ৪ নভেম্বর মামলার বাদি মোসলেমউদ্দিন আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজিরা দেন। ওইদিন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টে ক্রিমিনাল মিস কেস খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল দাখিল করেছেন উলে­খ করে বলেন, চেম্বার জজ মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে ২২ নং ক্রমিকে রেখে আগামি বছরের ৪ জানুয়ারি শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ সংক্রান্ত আইনজীবীর প্যাডে লেখা সনদ তারা আদালতে উপস্থাপন করেন। বিকেলে বিচারক হুমায়ুন কবীর এ সংক্রান্ত শুনানী শেষে আসামীপক্ষকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মূল কপি উপস্থাপন ও বাদির সাক্ষীর জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ওই দিন তারা সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশের কোন কপি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি।

তিনি আরো বলেন, গত ৩০ নভেম্বর মামলার বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন, সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুকে নতুন করে সাক্ষ্য নেওয়া ও মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন ও বাস চালক নজিবুল­ার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আদালত মঞ্জুর করে। ওই দিন সাক্ষ্য দেন সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান ও বাস চালক নজিবুল­াহ। গত ৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীর জন্য সময়ের আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে আগামি ২০ ডিসেম্বর সাক্ষীর জন্য দিন দার্য করেন।

এসএম মুনীর আরো বলেন, ২০১৭ সালের ২৩ আগষ্ট আসামীপক্ষ সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে বিচারাধীন এসটিসি ২০৭/১৫ ও ২০৮/১৫ মামলা দু’টির কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত করেন। বিষ্ফোরক দ্রব্য আইন ও অস্ত্র আইনের মামলা দু’টি (২০৭/১৫ ও ২০৮/১৫) বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় বিচারপতি মোস্তফাজামান ইসলাম ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম মোল­ার যৌথ বেঞ্চ আসামীপক্ষের স্থগিতাদেশ ও আপিল খারিজ করে দেওয়ায় নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু করতে কোন বাধা রইল না। সেক্ষেত্রে অস্ত্র আইনের মামলাটি নতুন করে অভিযোগ গঠণ করতে হবে। ফলে বর্তমান সরকারের আমলে বিচার বিভাগ যে স্বাধীন তা প্রমাণিত হলো। আগামিতে কোন বিরোধী দলীয় নেতা যাতে এ ধরণের হামলার স্বীকার না হয় সেজন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সেদিন কলারোয়ার ওই নির্যাতিতার মামলার ন্যায় বিচার হলে আজ দেশে এত ধর্ষণ হতো না। একইসাথে ওই নির্যাতিতার মামলাটি পূণরায় চালু করার কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে বলেন জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!