সাতক্ষীরায় গত পাঁচ বছরে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কমপক্ষে শতাধিক বাল্য বিয়ে সম্পাদনের ঘটনায় এবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন দেবহাটার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বহুল আলোচিত ম্যারেজ রেজিস্ট্রার মুহাঃ আবুল বাশার।
মঙ্গলবার বিকালে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত আবুল বাশারকে। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোবাইল কোর্টে তাকে ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ম্যারেজ রেজিস্ট্রার মুহাঃ আবুল বাশার (৩৫) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের জিয়াদ আলীর ছেলে ও ঘোনাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার। একইসাথে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে গাজীরহাট এলাকায় ‘কাজী অফিস’ নামের চেম্বার খুলে বসে সরকারি আইন অমান্য করে জাল কাগজ তৈরি, স্বাক্ষর ও সিলমোহর নকল করাসহ জালিয়াতির মধ্য দিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বাল্যবিয়ে দিয়ে আসছিলেন দেবহাটার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার মুহাঃ আবুল বাশার।
কয়েকদিন আগেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী আবুল বাশারের কাজী অফিস নামের চেম্বারটিতে অভিযান চালিয়ে গত ৫ বছরে কমপক্ষে শতাধিক বাল্যবিয়ে সম্পাদনের নথি জব্দসহ অভিযুক্ত ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আবুল বাশারকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করলে বিষয়টি সকলের সামনে চলে আসে।
বিষয়টি জানতে পেরে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ’র নেতৃত্বে পুলিশ নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আবুল বাশারকে মঙ্গলবার বিকালে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বাশারকে আসামি করে দেবহাটা থানায় একটি মামলা (নং-০৫) দায়ের করেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন জাহান।
মামলার বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন যে, ১৩টি নিকাহনামা রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করে দেখা গেছে দীর্ঘদিন ধরে বাল্যবিবাহ, বাল্যবিবাহের জাল নিকাহনামা, অসামঞ্জস্য তারিখের বিভিন্ন রেজিস্টার, একই বছরে একই নম্বরে একাধিক চলমান রেজিস্ট্রার ব্যবহার করে বাল্য বিবাহ সম্পাদন করে এসেছেন ম্যারেজ রেজিস্টার আবুল বাশার। তার এরূপ কার্যাবলী বর্তমান সরকারের ‘বাল্যবিবাহকে না বলুন’ নীতির পরিপন্থী। পাশাপাশি জালিয়াতির মাধ্যমে একই সনে একই তারিখে একাধিক রেজিস্ট্রারে বিবাহ নিবন্ধন এর উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রারভুক্তকরণ করতেন বাশার। যা আইজিআর এর কার্যালয়ের নির্ধারিত দাপ্তরিক নীতির পরিপন্থী। এতে সাধারণ জনগণ যেমন প্রতারণার শিকার হচ্ছে, তেমনি বাল্যবিবাহ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সরকারের প্রচেষ্টাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্যর্থ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
অপরদিকে তিনি ভুয়া রেজিস্ট্রারে বিবাহ সম্পাদন করে সরকারি ধার্যকৃত রেজিস্ট্রি ফি সঠিকভাবে সরকারি খাতে জমা না করে নিজে আত্মসাৎ করেছেন মর্মেও প্রতীয়মান হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন জাহান।
এলাকাবাসী জানায় বাল্যবিয়ে সম্পাদনের পাশাপাশি ইতিপূর্বে কয়েকবার দাখিল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতিসহ অছাত্রদের দিয়ে দাখিলের প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ানোর সময়ও অভিযুক্ত ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ও মাদরাসা সুপার আবুল বাশার আটক হন। এমনকি কয়েকবার গ্রেপ্তারকালে মাদরাসার দেয়াল টপকেও আবুল বাশারের পালিয়ে যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে মোবাইল কোর্টে ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদানের পাশাপশি অভিযুক্ত বাশারের লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। এ ঘটনার দু’দিন অতিবাহিত হতে না হতেই জালিয়াত ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বাশারকে গ্রেপ্তার করে কারাগরে পাঠিয়েছে দেবহাটা থানা পুলিশ।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আবুল বাশারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আবুল বাশারকে আসামি করে মহিলা বিষয়ক অফিসার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম