সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন কর্মী ও সমর্থকদের মারপিট ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। গত পহেলা নভেম্বর রাত ৮টা থেকে নয়টার মধ্যে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরদিন সংশি¬ষ্ট রিটার্ণিং অফিসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ করেও শনিবার (৬ নভেম্বর) বিকাল পর্যন্ত কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগিরা। ফলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারছেন না।
কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, আগামি ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জাম দেওয়ার পরদিন থেকে তিনি তার কর্মী সমর্থককে নিয়ে প্রচার প্রচারনা শুরু করেন। একইভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ রিয়াজউদ্দিন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নৌকার বিপক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় তাকে ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম আরো জানান, পহেলা নভেম্বর রাত আটটার দিকে তার নির্বাচন কর্মী জয়পত্রকাটি গ্রামের মাহাববুবর রহমান বিষ্ণুপুর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বানিয়াজাঙ্গাল নামক স্থানে পৌঁছালে শেখ রিয়াজউদ্দিনের সক্রিয় কর্মী ও ভাগ্নে পরিচয়দাতা বন্দকাটি গ্রামের ফিরোজ হোসেন লস্কর, হাফিজুর মোড়ল, সোহাগ হোসেন, বাবুল হোসেন, মুকুল হোসেন, আব্দুর রহিম, আরিফুল ইসলাম, নীলকণ্ঠপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, আলাউদ্দিন মোড়ল, আবু তাহের, মামুনুর রশিদ মিন্টু ও জয়পত্রকাটি গ্রামের ফিরোজ হোসেনসহ ২০/২৫ জন তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে তাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। কেড়ে নেওয়া হয় তার পকেটে থাকা সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। ভেঙ্গে দেওয়া হয় মোটর সাইকেলের লুকিং গ্ল¬াস। পরবর্তীতে বন্দকাটি গ্রামের আব্দুল মাজেদের বাড়িতে যেয়ে তাকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে এনে মারপিট করা হয়। বাবাকে রক্ষায় এগিয়ে আসায় ছেলে এমদাদুল ও মেয়ে রেবেকাকে মারপিট করে হামলাকারিরা। একইভাবে মুকুন্দমধুসুধনপুরের মুজাহিদের বাড়িসহ সাতটি বাড়িতে হামলা চালায় ওই হামলাকারিরা। তার (জাহাঙ্গীর) পক্ষে ভোট করলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
ঘটনার পরদিন ২ নভেম্বর তিনি হামলাকারি ফিরোজ হোসেন লস্করসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্ণিং অফিসার উপজেলা পশুসিম্পদ কর্মকর্তঅ মনোজিৎ কুমার ঘোষ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শেখ রিয়াজউদ্দিন পরদিন ৩ নভেম্বর থানায় তাকেসহ পারুলগাছা ইউপি সদস্য আফছারউদ্দিন মোড়ল, মুকুন্দমধুসুধনপুরের সাঈদ শেখ, মিন্টু মোড়ল, হুদা শেখ ও রুইন হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরীতে পহেলা নভেম্বর রাত আটটার দিকে চৌমুহুনী দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
এদিকে এঘটনার কোন প্রতিকার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালাতে পারছেন না। তিনি এব্যাপাওে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে শনিবার বিকাল চারটার দিকে মোবাইল ফোনে শেখ রিয়াজউদ্দিন জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কোন জনসমর্থন নেই। তাই প্রশাসনকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্নদিকে ঘোরাতে ও তার সুনাম নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিষ্ণুপুর ইউপি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্ণিং অফিসার মনোজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, অভিযোগের কপিটি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা রিটার্ণিং অফিসার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অগ্রবর্তী করেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম জানান, বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ। তাই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
খুলনা গেজেট/এএ