সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিশাখালি মৌজায় বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা শেষে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১১টার দিকে জজ কোর্ট চত্বরে তিন ভূমিহীন নেতাকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। দেবহাটার সখীপুর ও পারুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ২৫/৩০ জন ভূমিদস্যু পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
দেবহাটা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের হরিপদ স্বর্ণকারের ছেলে সুনীল কুমার স্বর্ণকার জানান, সিএস রেকর্ড অনুযায়ি খলিশাখালি মৌজায় তার ঠাকুর দাদা গণেশ স্বর্ণকারের নামে ৩৬ বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমিসহ একই মৌজার হিন্দু সম্প্রদায়ের ফেলে যাওয়া এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি সখীপুর, পারুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার কথিত ভূমিদস্যুরা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে দখল করে আসছিল। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেখভালের দায়িত্ব দেয়। ফলে জমির মালিক হিসেবে দাবিদাররা ওই আদেশের বিরুদ্ধে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টে ১৬৮/২১ নং সিভিল রিভিশন দাখিল করেন। ফলে ওই জমি সরকারের ধরে নিয়ে সাপমারা খাল খননের সময় উচ্ছেদ হওয়া বিভিন্ন এলাকার ভূমিহীনরা খলিশাখালি এলাকার এক হাজার বিঘা জমিতে বসবাস শুরু করেন। একইভাবে তিনিও তার পৈতৃক জমিতে মাছ চাষ শুরু করেন।
এদিকে এ ঘটনার পর ভূমিদস্যুরা তাকেসহ ভূমিহীন নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়। তাতেও সন্তুষ্ট হতে না পেরে ভূমিদস্যুরা ভূমিহীনদের খুপড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ভূমিহীনদের পক্ষ থেকেও আদালতে দু’টি মামলা করা হয়। এহেন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উভয়পক্ষকে নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় এক আলোচনা সভার আহবান করা হয়। জেলা প্রশাসকের আহবানে সাড়া দিয়ে তিনিসহ কয়েকজন সভায় হাজির হন। জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে সার্বিক বিষয় উপস্থাপিত হলে ভূমিদস্যুদের জমি ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা আসেনি। একপর্যায়ে ভূমিদস্যুরা নিজ উদ্যোগে ওই জমি দখল করে নেওয়ার কথাও ব্যক্ত করেন।
সুনীল স্বর্ণকার আরো বলেন, সভা শেষে সকাল সোয়া ১১টার দিকে তিনিসহ গোলাপ ঢালী ও শরিফুল ইসলাম বিআরটিএ অফিসের সামনের বারান্দা দিয়ে নেমে জজ কোর্ট চত্বরে ইলিয়াসের দোকানের সামনে এলে সখীপুরের ভূমিদস্যু আব্দুল মজিদ, কাজী গোলাম ওয়ারেশ, নজরুল ডাক্তার, আনারুল ইসলাম, পারুলিয়ার আনছার হাজীসহ কয়েকজন তাদেরকে মারপিট করে জামা ছিঁড়ে দেয়। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের কাছে থাকা সামান্য টাকা। তাদের চিৎকারে কয়েকজন দোকানদার, আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারি ছুঁটে এলে হামলাকারিরা চলে যায়। এ ঘটনার পরপরই তারা বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মহোদয়কে অবহিত করেছেন।
এ ব্যাপারে খলিশাখালির বিরোধপূর্ণ জমির একাংশের মালিকানা দাবিদার ডাঃ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সুনীল স্বর্ণকারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই