প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে টিকাকেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার অভিযোগে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বচসার জেরে সাতক্ষীরায় অসুস্থ সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা হাইস্কুল অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
টিকা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীকে মারপিট এবং টিকার ভায়াল ভাংচুরের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ প্রহরায় সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিকালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা যায়, বচসার ঘটনার এক ঘন্টা পর পুলিশ দৈনিক মানবজমিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ইয়ারব হোসেনকে তুজলপুর গ্রামে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ইয়ারব হোসেন ২০১৩ সালে সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের সহিংস তান্ডবে গুরুতর আহত হন এবং মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলেও এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। তিনি মস্তিস্ক ও হৃদরোগসহ নানান জটিলতায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইতিপূূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য দুই লাখ টাকার সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়াও সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার গুরুত্বপূর্ণ একজন স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।
এদিকে সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের গ্রেপ্তার সম্পর্কে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, তিনি খবরটি শুনেছেন। টিকাকেন্দ্রের এই ঘটনার পর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছিল। তবে তাকে আটকের বিষয় সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। তিনি আরও বলেন, একটি টিকা ৫ জনকে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এটা কোন অব্যবস্থাপনা নয়।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাবুল আক্তার জানান, ঝাউডাঙ্গা অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে টিকাদান কার্যক্রম চলছিল। এসময় সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন সেখানে গিয়ে একই টিকা ৫ জনের দেহে পুশ করার ঘটনায় আপত্তি করেন। এ নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। তিনি স্বাস্থ্যকর্মী মনিরুল ইসলামকে একটি চড় মারেন। এই অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলা নং ৮৩/২০২১ ধারা দন্ডবিধির ১৪৩/ ১৮৬/ ১৮৯/ ৩২৬/ ৩৩২/ ৩৩৩/ ৩৫৩ ও ৪২৭।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়ারব হোসন বলেন, ঝাউডাঙ্গা হাইস্কুল কেন্দ্রে টিকা দেওয়া নিয়ে অব্যবস্থাপনার খবর পাই। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গেলে স্বাস্থ্যকর্মী মনিরুল ইসলাম আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই কে রে? তুই কথা বলার কে?’
ইয়ারব হোসেন বলেন, ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে সে আমার গায়ে হাত তুললে আমিও পাল্টা একটি চড় মারি। তবে কোন ভাংচুরের ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, এই বিষয়টিকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে মামলা করে পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসেছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, টিকাকেন্দ্রে হাঙ্গামা করাটা দুঃখজনক। স্বাস্থ্যবিভাগকে বিষয়টি সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ওই মামলার আসামী হিসেবে ইয়ারব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম