আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে তিনটিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত নৌকার প্রার্থী। এসব আসনে মোট ৩০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সাতক্ষীরা-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত থাকলেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরা-১ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থীরা।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় এখনে অনেকটাই জয় নিশ্চিত আ’লীগ প্রার্থীর। বাকি দুটি আসনের মধ্যে সাতক্ষীরা-১ ও সাতক্ষীরা-৪ এ নৌকার প্রার্থীর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হবে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ৪টি সংসদীয় আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন মোট ৩৭ জন প্রার্থী। যাচাই-বাছাইয়ের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ৩৬ জনকে বৈধ ও ঋণখেলাপি হওয়ার দায়ে একজনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। পরে এই ৩৬ জনের মধ্যে থেকে ৬ জন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রতীক পেয়েছেন ৩০ জন।
প্রতীক বরাাদ্দ পাওয়ার পর সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে এবার লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দীদার বখত, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এ্যাঃ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সুমি ইসলাম, মুক্তিজোটের প্রার্থী শেখ মোঃ আলমগীর ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের ইয়ারুল ইসলাম। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, নুরুল ইসলাম ও সরদার মজিব। তবে প্রতীক বরাদ্দের পরদিনই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান।
এদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন ৮ জনের বিরুদ্ধে লড়লেও এ আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হবেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দীদার বখত। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দু’জনের মধ্যে কাকে নির্বাচিত করবেন তা ভোটের দিন চূড়ান্ত করবেন ভোটাররা। ফলে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়েও নির্বাচনে জিততে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন ফিরোজ আহমেদ স্বপন।
সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে লড়ছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী মোঃ আশরাফুজ্জামান আশু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান এমপি ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ট্রাক প্রতীকে মোঃ আফসার আলী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকে মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিএনএমের নোঙর প্রতীকে মোঃ কামরুজ্জামান বুলু, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী ফারহান মেহেদী ও কাচি প্রতীকের প্রার্থী এহছান বাহার বুলবুল। তবে এহছান বাহার বুলবুল ইতিমধ্যে লাঙ্গল প্রতীকের প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষনা দিয়েছেন।
দলের নির্দেশনায় সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী মোঃ আশরাফুজ্জামান আশু এবং ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির মধ্যে ভোটের মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা-আশাশুনি-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের হেভিওয়েট প্রার্থী ডা. আফম রুহুল হক, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের চাকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ তরিকুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আব্দুল হামিদ, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী মোঃ মঞ্জুর হোসান, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী রুবেল হোসেন ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী মোঃ আলিফ হোসেন। এই আসনটিতে কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় আওয়ামী লীগের বিজয় একরকম নিশ্চিত রয়েছে।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা, জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী মোঃ মাহবুবুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের প্রার্থী আসলাম আল মেহেদী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আমের প্রার্থী শেখ ইকরামুল ও কাচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনএমের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা। তিনি সাতক্ষীরা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ও চিফ হুইপ ছিলেন। এলাকায় তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে ভোটের মাঠে কে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবেন তা নির্ভর করবে ভোটারদের উপর। চুড়ান্ত ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের পর গণনার শেষ পর্যন্ত।
খুলনা গেজেট/এনএম