খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলন, ২২৫ কোটি টাকা বিক্রির সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার হিম সাগর ও ল্যাংড়া আমের খ্যাতি দেশ ব্যাপি। জেলায় বিশেষ পরিচর্যায় উৎপাদিত আম বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ঝড়বৃষ্টির কবলে না পড়লে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের অধিক ফলনের আশা করছেন বাগান মালিক ও চাষিরা। আশানুরূপ ফলন হলে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রির আশার কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।

আম চাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। এতে আয় হবে ২২৫ কোটি টাকার বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কম হয়েছিল। অগ্রিম আমের বাগান কিনে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল ব্যবসায়িদের। এবার প্রতি গাছে যেভাবে আম ঝুলছে, তা দেখে বেশ খুশি চাষিরা। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত এভাবে চললে এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, মল্লিকা, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য জাতের আমের ব্যাপক উৎপাদন হয়। চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয় সাতক্ষীরার আম। এ বছর নবমবারের মতো ইংল্যান্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে যাবে এই জেলার আম।

সূত্র আরও জানায়, আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পাকে। এ জন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রচন্ড দাবদাহের কারণে কিছু গুটি ঝরে পড়ছে। এতে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না দাবি কৃষি বিভাগের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৫ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সবমিলে চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ চাষি রয়েছেন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যে ফলন হয়েছে, তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

পৌরসভার মুনজিতপুর এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, এখানের আম অতুলনীয়। সাতক্ষীরার হিমসাগর বিখ্যাত। ল্যাংড়া ও আম্রপালির চাহিদা বেশি। গত বছর ১৫টি বাগান কিনেছিলাম। এ বছর ২০টি ইজারা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে। আম দ্রুত বড় হচ্ছে। গত কয়েক বছর দুর্যোগের কারণে মূলধন হারিয়ে ফেলেছি। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে, আশা করছি লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো।

অলিহর বাজারের আম ব্যবসায়ি মোকলেছুর রহমান জানান, গত বছর উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসান হয়েছিল। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগান লিজ নিলে তার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। বাগান পরিচর্যা, পোকামাকড় মুক্ত করতে ওষুধ প্রয়োগ, ফলনের পর বাজারজাত, শ্রমিকের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়। ফলন ভালো হলে আমাদের লাভ হয়। এবার আশা করছি লাভের মুখ দেখবো।

এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানালেন সুলতানপুর বাজারের আড়তদার মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, এ বছর কাঁচা আমের মণ ১৪০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে কম দামে কাঁচা আম কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেছেন। তাদেরও লাভ হয়েছে।

গত বছর পাকা আমের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল উল্লেখ করে মতিয়ার রহমান বলেন, এবার আরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। আমের সাইজ বড় ও দেখতে সুন্দর হলে ৮০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি করেছি। আর কিছুদিন পর পাকা আম বাজারে উঠতে শুরু করবে। বিগত বছরগুলোতে দেড়শ থেকে দুইশ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে। এ বছর আরও বেশি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। সেই পরিমাণ গুটি ধরেছে। মাঝে প্রচন্ড গরমে কিছু গুটি ঝরে গেছে। বর্তমানে গুটি থেকে আমের আকার বড় হয়েছে। তুলনামূলক এখন কম ঝরেছে। এজন্য এবার বেশি উৎপাদনের আশা করছি।

এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উল্লেখ করে সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদনে রেকর্ডের আশা করছি। গড়ে ৫০ টাকা কেজি ধরলে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে। বিদেশের রফতানির জন্য এবার বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদন এবং রপ্তানির জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এই কৃষিবিদ বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের শপগুলোতে যাবে সাতক্ষীরার আম।

এদিকে আম নিরাপদ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ ও বাজারজাত করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সূচি অনুযায়ী, আগামী ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য স্থানীয় আম পাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চাষিদের। ২৫ মে থেকে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আ পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে আম পাড়লে অপরিপক্ব থেকে যাবে।

তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলায় আমপঞ্জি ঘোষণা করা হলেও এক শ্রেণির অসাধু আম ব্যবসায়ি অধিক মুনাফা লাভের আশায় অপরিপক্ক আম ক্যামিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও ক্যামিক্যালে পাকানো অপরিপক্ক আম জব্দ করা হচ্ছে।

সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, নির্ধারিত দিনের পূর্বে আম বাজারজাত করলে সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা কার্বাইড বা ক্যামিক্যাল দিয়ে অপরিপক্ষ আম পাকাবে তাদেরকে আটক করে জেলে পাঠানো হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম  




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!