খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় নিঁখোজ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি
  বাজারে থাকা এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ, বাজারজাতকারীকে ১৬ লাক টাকা জরিমানা
  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নদীর বেড়িবাঁধ কেটে মাটি লুট!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সদ্য খননকৃত মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধ কেটে মাটি লুট করছে একটি প্রভাবশালী মহল। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। ডাম্পার গাড়ি ও মিনি ট্রাকে করে মাটি কেটে ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে সরকারি টাকায় খননকৃত নদীর বাঁধ ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমি ভরাট হওয়ায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

এদিকে ডাম্পার গাড়িতে মাটি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতি হচ্ছে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তার। ডাম্পার থেকে রাস্তার উপর মাটি পড়ার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে পিচের রাস্তা। নদীর দুই পাড়ের মানুষ ভুগছেন প্লাবন আতঙ্কে।

স্থানীয় উপজেলা যুবলীগ নেতা তোষিকে কাইফু বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর মাধ্যমে আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ও বুধহাটা ইউনিয়নের অধীনে মরিচ্চাপ নদী খনন করা হচ্ছে। নদী খনন করে মাটি দেয়া হচ্ছে বেড়িবাঁেধর উপর। কিন্তু সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি এলাকার জনৈক আক্তারুল ইসলাম বাঁেধ দেয়া ওই
মাটি ডাম্পার গাড়িতে ভর্তি করে তা গাড়ি প্রতি ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন। সদ্য খননকৃত মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধ কেটে দিনে
দুপুরে ট্রাক প্রতি ৮০০টাকায় বিক্রি করায় বেড়িবাঁধ সরু হয়ে যাচ্ছে। কাইফু আরও বলেন, ডাম্পার গাড়িতে করে ওই মাটি বহনের সময় বুধহাটা ইউনিয়নের নৈকাটি এলাকায় এলজিইডির সদ্য নির্মিত কার্পেটিং রাস্তায় পড়ে পিচ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তায় মাটি পড়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। এছাড়া মরিচ্চাপ নদী থেকে এই মাটি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জলাশয় ভরাট করছেন কিছু ব্যক্তি, যেটা সম্পূর্ণ বেআইনী। এভাবে মাটি কাটা চলতে থাকলে মরিচ্চাপ নদীর খননকাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জোয়ার- ভাটায় পানি উঠানামা শুরু করলে বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রাম প্লাবিত হবে। লবণ পানি প্রবেশ করলে ক্ষতি হবে ফসলের।

এলাকাবাসীর উদ্ধৃতি দিয়ে তোষিকে কাইফু বলেন, বর্তমানে মাটি নিচ্ছেন স্থানীয় পাইথালী ও গাজীরমাঠের জুলফিকার ও অরুণ মন্ডল নামের দুই ব্যক্তি। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা আক্তারুল ইসলামের কাছ থেকে ডাম্পার প্রতি ৮০০ টাকা করে মাটি কিনছি। আশাশুনি উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি হুমায়ূন কবির রাসেল বলেন, মরিচ্চাপ নদীর খনন কাজ এখনও শেষ হয়নি। এভাবে বেড়িবাঁধের মাটি সরিয়ে নিলে খনন কাজ শেষ হলে পানি ছেড়ে দিলে জোয়ারের পানিতে ভেসে যাবে বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। কেননা দীর্ঘদিন পরে নদী খনন হচ্ছে, পরে সেই মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বেড়িবাঁধের মাটি এভাবে কেটে নেওয়ায় সর্বনাশ হচ্ছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার এ প্রকল্প এলাকাবাসীর কোন উপকারে আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া বড় বড় ডাম্পার বোঝাই করা মাটি গ্রামের ভিতর দিয়ে এলজিইডির পিচের রাস্তরা উপর দিয়ে পরিবহনের কারণে সড়কটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু বলেন, বেড়িবাঁধের মাটি এভাবে নিয়ে যাওয়া বা বিক্রি করা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত কাজ। এভাবে খননকৃত নদীর বাঁধের মাটি কাটলে তা এলাকাবাসীর উপকারের পরিবর্তে অপকার হবে। তাই বাঁধ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনভাবে এটা বন্ধ করতে হবে বলে জানান তিনি।

এব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধ কেটে মাটি কাটার খবর শুনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি। আমি নিজেই সরেজমিনে যাব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।এদিকে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নদীর বাঁধ কেটে মাটি বিক্রির ঘটনায় স্থানীয়দের থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তোষিকে কাইফু।

এ ব্যাপারে আক্তারুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর সহযোগী ফোন রিসিভ করে বলেন, সাহেব বিজি আছেন। পরে কথা বলেন।

খুলনা গেজেট/ বিএমএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!