খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
রাজাকার খালেকের মামলার ৭নং স্বাক্ষী

সাতক্ষীরার ‘বীরাঙ্গনা’ সফুরা সব হারিয়েও পায়নি প্রাপ্য সম্মান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির সাবেক সাংসদ আব্দুল খালেক মন্ডলের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলাটির অন্যতম সাক্ষী ও সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের ‘বীরাঙ্গনা’ খ্যাত সফুরা খাতুন।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বিকালে যুদ্ধাপরাধী মামলায় জল্লাদ খালেক নামে পরিচিত রাজাকার আব্দুল খালেকের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের কাছে নিজের অনূভুতি ব্যক্ত করেছেন তিনি।

‘বীরাঙ্গনা’ খ্যাত সফুরা খাতুন (৭৫) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের মৃত মুনতাজ সরদারের স্ত্রী।

বীরাঙ্গনা’ সফুরা খাতুন জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার কোলে তিন দিনের এক সদ্য ভূমিষ্ঠ মেয়ে সন্তান ছিল। ওইদিন খালেক মন্ডলের নেতৃত্বে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। নিজ ছেলেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ায় আমার শাশুড়ি ধারালো-দা হাতে নিয়ে ঘরের দরজায় বসে ছিলেন। তবে জল্লাদ খালেকের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী আমাকে জোরপূর্বকভাবে নিয়ে যেতে চায়। আমি যদি না যাই তাহলে তারা আমার স্বামীকে মেরে ফেলবে।

ওইসময় আমার শাশুড়ি আমার কোলের সন্তানকে দেখিয়ে আমার ও আমার স্বামীর মুক্তি চাইলেও পাকিস্তানিদের মন গলেনি। স্বামীকে বাঁচাতে হলে আমার সতীত্ব বিসর্জন দিতে হবে অন্যথায় তারা আমার স্বামীকে মেরে ফেলবে বলে জানায়। নিরূপায় হয়ে স্বামীকে বাচাঁতে তিন দিনের শিশু সন্তানকে বাড়িতে রেখে আমি পাকিস্তানিদের সাথে যাই।

ওইসময় আমাকে ধরে নিয়ে জনৈক শরিতুল্লাহ সরদারের ঘরে নিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতন চালায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। একপর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে পড়লেও তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পায়নি। ওই সময় (মুক্তিযুদ্ধ) যদি খালেক মাওলানাকে হাতে পেতাম তাহলে আমি তার মুন্ডু কেটে নিতাম।

তিনি আরও জানান, ওইসময় নিজের সতীত্ব বিসর্জন দিয়ে আমি আমার স্বামীকে জীবিত উদ্ধার করি। তবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে আমার স্বামী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। সেই থেকে নিজের স্বামীসহ আমার ১০ সন্তানকে ভিক্ষা করে বড় করেছি। পরবর্তীতে রাজাকার খালেকের বিরুদ্ধে মামলা হলে সেই মামলার ৭নং স্বাক্ষী করা হয় আমাকে। রাজাকার খালেকের বিরুদ্ধে আমি স্বাক্ষী দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমার সতীত্ব বিসর্জনও দিয়েছি। তবে আজও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন তালিকায় আমার নাম ওঠেনি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি রাজাকার খালেকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেওয়ায় জামায়াত-শিবিররা আমাকেসহ আমার সন্তানদের নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকী দিয়ে চলেছে। আজ বাদে কাল আমি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবো, তবে আমার ১০ সন্তানের কী হবে? এলাকার মানুষ তাদেরকে আড় চোখে দেখে। আমি নিজেও সন্তানদের সাথে কথা বলতে লজ্জাবোধ করি। কেননা, আমার সাথে এতোকিছু ঘটে যাওয়ার পরেও সরকার থেকে আমার প্রাপ্য সম্মানটুকুও দেওয়া হয়নি। এ কারণে নিজ জীবনের শেষ সময়ে হলেও সরকারি ভাবে নিজ প্রাপ্য সম্মানটুকু পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!