খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

সাতক্ষীরার বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রজাতির আম

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় দফায় গত ১১ মে থেকে সুস্বাধু গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ আম ছাড়ানো শুরু হয়েছে। তাই মধু মাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই সাতক্ষীরার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বৈশাখী, গোলাপ খাসসহ সুস্বাধু বিভিন্ন প্রজাতির আম। বৈরী আবহাওয়ায় এ বছর আমের উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় আমের বাজার অনেক চড়া। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আম উঠায় চাহিদাও একটু বেশি।

সাতক্ষীরার বৃহতর আমের হাট শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে প্রতিদিন সকালে গ্রাম থেকে আসছে শতশত ভ্যানভর্তি পরিপক্ব গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ সহ বিভিন্ন জাতের আম। বাগানের গাছ থেকে পেড়ে এসব আম এনে রাখা হচ্ছে আড়তে। সেখান থেকে কিনছেন ক্রেতারা।জেলার বাইরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে এসব আম। ফলে রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ আসপাশের জেলা থেকে ব্যাপারি আসায় নানামুখী কর্মজজ্ঞে মেতে উঠেছে জেলার চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

গত ৯মে থেকে সাতক্ষীরায় আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততরের আয়োজনে গাছ থেকে পরিপক্ত পাকা আম পাড়া শুরু হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় গত ১১ মে থেকে গাছ থেকে গোবিন্দভোগ আম ছাড়ানো শুরু হয়। জাত ভেদে আম পাড়া চলবে জুন মাস পর্যন্ত। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রচুর পরিমানে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাস, সরিষাখাস জাতের আম উঠতে শুরু করেছে। বৈরী আবহাওয়া ও তাপ প্রবাহের কারণে এ বছর আমের ফলনও কম হয়েছে। তাই মৌসুমের শুরুতে আমের দামও অনেক চড়া। একই সাথে চাহিদাও অনেক বেশি। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এসব আম কিনতে আসছেন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা। এসব ক্রেতারা আবার অনলাইনের অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন সাধারণ খুচরা ক্রেতার কাছে।

কাকডাকা ভোর থেকেই জমে উঠছে আমের হাট। শুক্রবার (১৭ মে) সকালে দেখা গেছে গ্রাম থেকে আসছে সারি সারি আমভর্তি ভ্যান। যতদূত দৃষ্টি যায় ততদূর শুধু আমের ভ্যান। আমের বাজারে তিল ধারণের জায়গা নেই। ক্রেতার ভিড়ও লক্ষ্যণীয়। আমে সয়লাব শহরের সুলতানপুর বড়বাজার। যেদিকে তাকানো যাবে, সেদিকেই আম আর আম।

এদিকে, সাতক্ষীরার সুমিষ্ট আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন অনেক যুব উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে একজন অপূর্ব রায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা এই সময় আমের ব্যবসা করি। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে আমের দামদর নিয়ে পোস্ট করি এবং মার্কেটিং করি। তারপর ক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের ঘরে আম পৌঁছে দিই। আমরা শুধু মাধ্যম হয়ে কাজ করি, যার ফলে আমাদের কিছু লাভ থাকে। এই সময়টা সাতক্ষীরাসহ বাইরের অনেক উদ্যোক্তা এখানে অবস্থান করে অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন।

আম কিনতে আসা হাফিজুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার আম মানে ব্র্যান্ড। দেশের অন্য জেলার আমের থেকে সাতক্ষীরার আম সুমিষ্ট এবং স্বাদে অতুলনীয়। আম খেলে যাচাই করা যায়, এটা সাতক্ষীরার আম। সাতক্ষীরার আম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবছর বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাছাড়া এই আমের কদরও অনেক বেশি রাজধানী ঢাকায়।

বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ী সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের এমএ মাজেদ বলেন, তিনি অনলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমের অর্ডার নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কুরিয়ারের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌছে দেন। তিনি বলেন, একেকদিন আমের দাম একেক রকম। কোনদিন দাম বেশি হবে, কোনদিন কমবে-এটা আগে বলা যায় না। তবে এবছর আমের দাম অন্যবারের তুলনায় অনেকটা বেশি।

রাজশাহী থেকে আসা আম ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার আম আগে পাকে, তাই এ জেলার আমের চাহিদা দেশজুড়ে। আমি মূলত অনলাইনে আমের অর্ডার নিয়ে দেশজুড়ে সরবরাহ করি। আগের বছরের তুলনায় এবছর আম একটু দেরিতে বাজারে এসেছে। তবে চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

নাগরিক নেতা অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আগেভাগে বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম। এই আম চলে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। আগে পাওয়ার কারণে সাতক্ষীরার আমের চাহিদা সারাদেশ ব্যাপি।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১শত জন আম চাষি রয়েছেন। সবমিলিয়ে এ বছর ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কয়েকটি জাতের আম দিয়ে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ন্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপালি জাতের আম সংগ্রহ করা হবে। মনে রাখতে হবে, গাছের সব আম একসঙ্গে পাকে না। সুতরাং আমের রং আসার আগে তা না পাড়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!