সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার অন্যতম ভূমিহীন জনপদ ঢেপুখালীতে রাতের আঁধারে ভূমিদস্যুদের হামলা, বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) ভোর রাত আড়াই টার দিকে দুটি পিকআপ এবং বেশ কয়েকটি নসিমন ও মোটরসাইকেলে অন্তত শতাধিক অস্ত্রধারী নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ওই ভূমিহীন জনপদে ঢুকে হামলা এবং বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণ করলে বিকট শব্দে মুহুর্তেই গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে স্থানীয় মসজিদের মাইকে ‘এলাকায় ডাকাত পড়েছে’ বলে প্রচার দিয়ে এলাকাবাসি একত্রিত হয়ে অস্ত্রধারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এসময় অস্ত্রধারীরা পালিয়ে গেলেও, চালক ও হেলপারসহ তাদের বহনকারী একটি পিকআপ আটকে পুলিশে সোপর্দ করেন ভূমিহীনরা।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ঢেপুখালীতে ভূমিহীনরা বিক্ষোভ ও ঝাটা মিছিল করেছেন। মিছিলে ভূমিহীনরা হামলাকারী ভূমিদস্যুদের অস্ত্রবাজির প্রতিবাদে শ্লোগান দেয় এবং অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
ঢেপুখালী ভূমিহীন গ্রাম কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মো. আবুল কালাম, ভূমিহীন নেতা শওকত হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান সরদারসহ বেশ কয়েকজন জানান, সখিপুরের সাবেক চেয়ারম্যান সালামতুল্যাহ গাজি, কাজলা ইন্দ্রনগরের রহিম পাড় ও করিম পাড়, নাংলার হারুন বিশ্বাস এবং দেবীশহরের কিংকর স্বর্ণকারের মালিকানাধীন নওয়াপাড়া ইউনিয়নের রামনাথপুর মৌজার প্রায় ১৪০ বিঘা জমি ১৯৯৭ সালে পাওয়ারনামা স্বত্ত্বে কিনে তাতে বসতি গড়ে তোলেন অর্ধশতাধিক ভূমিহীন পরিবার।
জমিটি একপর্যায়ে খাস খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত হলে আইনি প্রতিকারের জন্য সরকারের সাথে মামলায় জড়ায় মালিকপক্ষ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিহীনদের হটিয়ে গোটা জমি জবরদখলের হুমকি দিয়ে আসছিলেন পাশ্ববর্তী কালাবাড়িয়ার বর্তমান বাসিন্দা ও কালীগঞ্জের সন্যাসীরচক গ্রামের মৃত রুপচাঁদ গাজির ছেলে প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামী চিহ্নিত ভূমিদস্যু রুহুল আমিন। পাশাপাশি রুহুল আমিনের স্ত্রী তানিয়া বেগম প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে নিজেকে ওই গোটা সম্পত্তির মালিক দাবি করে ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে আসছিলেন। এনিয়ে গেল কয়েক মাস ওই জনপদে আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এদিকে শনিবার ভোর রাতে ভূমিদস্যু রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী তানিয়া বেগম অস্ত্রধারী ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে অতর্কিত ভূমিহীন জনপদে হামলা, বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণ করে ঘুমন্ত ভূমিহীন বাসিন্দাদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করে। তবে ঐক্যবদ্ধ এলাকাবাসির প্রতিরোধের মুখে অস্ত্রধারীরা একপর্যায়ে পিছু হটে বলেও জানান ভূমিহীনরা।
নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণের ঘটনাটি রাতেই শুনেছি। পরে ভূমিহীনদের হাতে আটক একটি পিকআপ ও এর চালক এবং হেলপারকে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) বাবুল আক্তার বলেন, ‘জমি দখলকে কেন্দ্র করে রাতে ঢেপুখালীতে গোলযোগ বাঁধলে পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে ভূমিহীনরা ওই জনপদে বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ করলেও পুলিশ তেমন কোন আলামত পায়নি। ঘটনাটি সুক্ষভাবে তদন্ত এবং পিকআপের চালক ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ