সাতক্ষীরায় ভূমি কমিটির এক সম্মেলন শনিবার (১৯ মার্চ) সকালে তালা উত্তরণ আইডিআরটি চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভূমি কমিটি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন উত্তরণ যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটির সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান আলোচক ছিলেন উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম।
উত্তরণের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ মনিরুজ্জামান জমাদ্দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. পুলিন বিহারী সরকার, কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটি নেতা অধ্যাপক আনিসুর রহিম, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, অধ্যক্ষ নাদিরা পারভীন, আলিনুর খান বাবলু, শ্যামল সিংহ রায়, এড. আজাদ হোসেন বেলাল, এড. বাবুল হাওলাদার, সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, কল্যাণ ব্যানার্জী, এম কামরুজ্জামান, সোহরাব হোসেন, হেদায়েত উল্লাহ, ভূমি কমিটি নেতা মইনুল ইসলাম, ওহাব আলী সরদার, সরদার আমজাদ হোসেন, মোশারফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম মোল্যা, নিত্যাই গাইন, শেখ সেলিম আকতার স্বপন, শেখ মাহতাব হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার, অধ্যাপক অচিন্ত্য সাহা, ইলা রায় প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ শাসনের আগে ভারতবর্ষে জমি কোন বিক্রয়যোগ্য পণ্য ছিল না এবং তখন জমি কেনা বেচা করা যেত না। এ কারণে জমি তখন কৃষকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র সমস্ত জমির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং জমিদাররাই জমির মালিক হয়ে ওঠে। এভাবে কৃষকরা জমির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং এক অর্থে তারা ভূমিদাসে পরিণত হয়। দীর্ঘ বিপ্লব ও সংগ্রামের পর ১৮৮৫ সালে প্রজাস্বত্ব আইন পাস হওয়ার পর অবশেষে কৃষকরা তাদের ভূমির অধিকার ফিরে পেয়েছিল। এই সময় জমি আবার কৃষকদের কাছে ফিরে যায়। কিন্তু জমি তখন বিক্রয়যোগ্য পণ্য হয়ে ওঠে। জমি বিক্রয়যোগ্য পণ্য হওয়ার কারণে অসহায় ও দুর্বল কৃষকরা শক্তিশালী স্থানীয় অভিজাত শ্রেণীর কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হতো। কারণ তারা আইন সম্পর্কে সচেতন ছিল না আবার তাদের নির্যাতনেরও ভয় ছিল। অন্যদিকে ভূমি অভিজাত বা জমিদারগণ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা পেতো। এইভাবেই ক্ষুদ্র কৃষকরা আরও দুর্বল হয়ে ধীরে ধীরে ভূমিহীন হয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে বাংলায় জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং রাষ্ট্র এই বিপুল পরিমাণ জমির উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে যা বর্তমানে খাসজমি নামে পরিচিত। ১৯৭২ পিও ৯৮/৭২ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে কৃষি খাসজমি এবং খাস জলাশয় বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৭ সালে সরকার খাসজমি বিতরণ নীতিমালা তৈরী করে। এই নীতিমালার মাধ্যমেই রাষ্ট্র খাসজমি বিতরণের প্রক্রিয়া তুলে ধরে। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে, খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিতে সংশোধন আনা হয়। বর্তমানে ১৯৯৭ সালের নীতিমালা মেনে সরকার ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করে থাকে। যাদের কোন জমি নেই বা শুধুমাত্র ১০ শতক জমি রয়েছে কিন্তু পরিবারটি কৃষি নির্ভর তারাই খাস জমি পাওয়ার যোগ্য। সরকার তাঁদের মধ্যে জমি বিতরণ করে থাকে।
সম্মেলনে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৮টি উপজলোর ভূমি কমটিরি নতেৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এরআগে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। এছাড়া অনুষ্ঠারে শুরুতেই ভূমি কমিটির প্রয়াত নেতা-কর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
খুলনা গেজেট/এএ