প্রতীক বরাদ্দ শেষে শুরু হয়ে গেছে ভোটের লড়াই। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার চারটি আসনের ৩টিতে লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব আসনগুলিতে ৩০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
বিএনপি-জামায়াতের অংশগ্রহণ বিহীন এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন নির্বাচনের মাঠে। ভোটার উপস্থিতি কম হলে নির্বাচনের হিসাব নিকাশ এক ধরনের হতে পারে। আবার ভোটার উপস্থিতি বেশি হলে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে।
গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর রংপুরের বাইরে জাতীয় পাটির সাতক্ষীরা জেলায় শক্ত ভীত ছিল। যে কারণে ২০০৯ সালের সবদলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার দুটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করে। পরবর্তী ২০১৪ সালের নির্বাচনে ওই আসন দুটিতে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে জাপা প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে সাতক্ষীরার রাজনীতির মাঠ থেকে দ্রুত কোণঠাসা হয়ে পড়ে জাতীয় পার্টি। পরবর্তী ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি সেই হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। এবার বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জেলার দুটি আসন ফিরে পাওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় দলটি জেলার একটি (সাতক্ষীরা-২) আসন ফিরে পেতে সক্ষম হয়। তবে জেলার চারটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে দলটির প্রার্থীরা।
এদিকে জাতীয় পার্টিকে একটি আসন ছেড়ে দেওয়ায় জেলার চারটি আসনের তিনটিতে নৌকা নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির ৪ জন, এনপিপির ৩ জন, বিএনএম এর ২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ২ জন, ওয়ার্কার্স পাটির ১ জন, স্যাম্যবাদী দল (এমএল) ১ জন, জাকের পার্টি ১ জন, মুক্তিজোট ১ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৮ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে দুইজন সাবেক ও বর্তমান এমপিসহ ৭ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। আবার আওয়ামী লীগ মনোনীত তিনজন নৌকার প্রার্থী এবং একটি আসনে নৌকা প্রত্যাহার হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেপথ্যে সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও তিনটি আসনে বর্তমান ও সাবেক ৫ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর বাইরেও নির্বাচনের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার মতো একাধিক প্রার্থী রয়েছেন বিভিন্ন আসনে। ফলে সাতক্ষীরায় নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রচারণার শুরুতেই। তবে, ইতিমধ্যে সাতক্ষীরা-১ আসনের দুইজন সাবেক ও একজন বর্তমান সংসদ সদস্য প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে অনানুষ্ঠানিকভাবে মত প্রকাশ করেছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত কে থাকছেন আর কে থাকছেন না সেটি স্পষ্ট হতে আরও দু’একদিন সময় লেগে যেতে পারে।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে নির্বাচনের মাঠে সর্বোচ্চ ১০ জন প্রার্থী। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ দিদার বখত। শক্ত অবস্থানে রয়েছেন মুক্তিযদ্ধে তৎকালীন সাতক্ষীরা মহাকুমা মুজিব বাহিনীর প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং দলের জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান। নৌকা না পেলেও নির্বাচনের দলীয় প্রতীক হাতুড়ি নিয়ে মাঠে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবং ওয়ার্কার্স পাটির পলিট ব্যুরোর সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। মাঠে রয়েছেন তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও জোট রাজনীতির বলী হওয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান শেখ নুরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের জেলা নেতা এবং সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম মুজিবুর রহমানও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তিনি সরদার মুজিব নামে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। এই আসনে নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব এড. মো. ইয়ারুল ইসলাম। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির সুমি ইসলাম, মুক্তিজোটের শেখ মো. আলমগীর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সমর্থক মো. নুরুল ইসলাম।
সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবু শেষ মুহূর্তে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখানে প্রধান প্রার্থী এখন জেলা জাতীয় পাটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীন রাজনীতিবীদ আশরাফুজ্জামান আশু। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে প্রার্থী হয়েছেন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ আফসার আলী। এছাড়াও প্রার্থী রয়েছেন এনপিপির মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিএনএম-এর মো. কামরুজ্জামান বুলু, তৃণমূল বিএনপির মোঃ ফারহান মেহেদী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এনসান বাহার বুলবুল।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, তিনবারের সংসদ সদস্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক-এমপি হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। একটানা চতুর্থবার এমপি হওয়ার এই লড়াইয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন জাতীয় পার্টির তরুণ নেতা এড. স. ম আলিফ। এছাড়াও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন স্যাম্যবাদী দল (এমএল) এর পলিট ব্যুরোর সদস্য শেখ তরিকুল ইসলাম, এনপিপির মো. আব্দুল হামিদ, তৃণমূর বিএনপির রুবেল হাসান এবং জাকের পার্টির মো. মঞ্জুর হোসেন।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন এসএম আতাউল হক দোলন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি এ কে ফজলুল হকের ছেলে এবং শ্যামনগরের সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। জেলার রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজের এই তরুণ প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনএম-এর এইচএম গোলাম রেজা। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবর রহমান। এছাড়াও তৃণমূল বিএনপির আসলাম আল মেহেদী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ শফিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র মোঃ মিজানুর রহমান ও এনপিপির মোঃ ইকরামুল।
চারটি আসনে উক্ত ৩০ প্রার্থীর মধ্যে কমপক্ষে তিনটি আসনে জোর প্রতিদ্বন্দ্বীতা হতে পারে বলে রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম