খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
  নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১৭
কোন প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায়

সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানিতে অনিশ্চিয়তা

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন নির্দেশিত আমপঞ্জি অনুযায়ি আগামী ১২ মে সুস্বাদু গোবিন্দভোগ আম বাজারে উঠবে। এছাড়া ২৫ মে হিমসাগর ও ১ জুন ল্যাংড়া বাজারজাত করা যাবে। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের পরও কোন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আম ক্রয়ে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে আম রপ্তানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত মৌসুমে ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে আম রপ্তানির চুক্তি হলেও চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা চুক্তি করেনি বলে জানিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে সাতক্ষীরার সুস্বাদু হিমসাগর, গোবিন্দভোগ ও ল্যাংড়া আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। মৌসুমের আগে থেকে বাগান নির্ধারিত করে চাষীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আম উৎপাদন করায় বিদেশে সাতক্ষীরার আমের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত কোন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার আম ক্রয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কোন চুক্তি করেনি। সে কারণে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে দুঃচিন্তার মধ্যে পড়েছেন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারি চাষিরা।

তবে সাতক্ষীরা থেকে আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া জানিয়েছে, ইউরোপের কয়েকটি দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিগগির তারা আমবাগান পরিদর্শনে বাংলাদেশে আসতে পারেন। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো দিন-তারিখ তারা দেননি।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় আম উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টন, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৫ হাজার টন বেশি। গত মৌসুমে জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫ হাজার টন।

সূত্রটি জানায়, জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, তোতা, আম্রপালি ও ফজলিসহ অন্তত ১৫ জাতের আম উৎপাদন হয়, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারি চাষী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁকাল এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে হিমসাগর, গোবিন্দভোগ ও ল্যাংড়া আম চাষ করেছেন। তবে অন্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রতিটি গাছে আম ধরেছে বেশি। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী আগামী ১২ মে গোবিন্দভোগ, ২৫ মে হিমসাগর ও ১ জুন ল্যাংড়া আম গাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

তিনি বলেন, নির্ধারিত তারিখের মধ্যে যদি বিদেশী ক্রেতারা আম আমদানির চুক্তি না করে তাহলে দেশীয় বাজারে বিক্রি করতে হবে রপ্তানিযোগ্য আম। তখন ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে না।

কলারোয়া উপজেলা সদরের রপ্তানিযোগ্য আমচাষী কবিরুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ বিঘা জমির বাগানে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করেছি। এর মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ ও আম্রপালি উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বাগানে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সলিডারিদের তত্ত্বাবধানে বাগান পরিচর্যা করি। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত উপায়ে আমার বাগানে আম উৎপাদন করেছি। এখন ক্রেতারা যদি আমার বাগানের আম আমদানি করেন তাহলে ভালো লাভ হবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুখরালী গ্রামের আমচাষী খোকা হোসেন বলেন, বিগত ২০/২৫ বছর ধরে আমি বিভিন্ন এলাকায় আম বাগান ক্রয় করি। চলতি মৌসুমেও প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে ১৫/১৬টি আম বাগান কিনেছি। একেকটি বাগানে ৩০/৫০টি গাছ রয়েছে। আম গাছে মুকুল আসার সাথে সাথেই মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন দামে এসব বাগান ক্রয় করি। এর পর আম পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিক দিয়ে এসব বাগান পরিচর্যা করি। গত চার/পাঁছ বছরের মধ্যে চলতি মৌসুমে বাগানে সবচেয়ে বেশি আমের ফলন হয়েছে। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে সব খরচ বাদ দিয়েও ১৫/২০ লাখ টাকা মুনাফা হতে পারে।

আম রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত মৌসুমে ইউরোপের কয়েকটি দেশে সাতক্ষীরা থেকে ২ হাজার ১০০ কেজি আম রপ্তানি করি আমরা। চলতি মৌসুমেও ইতালি, ইংল্যান্ড ও হংকংয়ের কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে সাতক্ষীরার আম রপ্তানি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই ওই ক্রেতারা সাতক্ষীরায় পৌঁছে রপ্তানিযোগ্য আমবাগান পরিদর্শন করে চুক্তি করবেন বলে আশা করছি। এরই মধ্যে সলিডারিদের তদারকিতে ২৯০ একর জমির ৩৫১টি বাগান মালিককে বিষমুক্ত আম উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সলিডারিদের পক্ষ থেকে দেশের বাজারেও সাতক্ষীরার বিষমুক্ত আম সরবরাহ করা হয়।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা কোনো রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারী মালিকের সঙ্গে চুক্তি করেনি। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলার ৮১টি রপ্তানিযোগ্য আমবাগান প্রস্তুত করা হয়েছে। বিষমুক্ত আম উৎপাদনে এসব বাগানের ৮১ জন আমচাষীকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করেছেন।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন জাতের আরো সুস্বাদু ৪৫ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পাওে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!