সাতক্ষীরায় স্ত্রীর সাথে বিরোধের জেরধরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র নিজের শিশু সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে পিতা। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের ধলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর স্থানীয় জনতা ঘাতক পিতা ইয়াসিন আলীকে আটক করে পুলিশে সোপার্দ করে।
নিহত শিশুর নাম মোঃ আরিফ বিল্লাহ (৮)। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের ধলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে বসবাসকারি ইয়াসিন আলী গাজীর ছেলে। আরিফ বিল্লাহ ধলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বির্দ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
ঘাতাক ইয়াসিন আলী গাজী (৩৫) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের চুপড়িয়া গ্রামের মৃত নূর ইসলাম গাজীর ছেলে। সে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ধলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে বসবাস করতো।
আরিফ বিল্লাহ’র মা রোকেয়া খাতুন জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে ইয়াছিন আলীর সাথে ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয়। তিন বছর আগে ধলবাড়িয়া মাঠপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পান তিনি। এরপর থেকে একমাত্র সন্তান আরিফ বিল্লাহসহ স্বামীকে নিয়ে তিনি সেখানে বসবাস করতে থাকেন।
রোকেয়া খাতুন আরো বলেন, আমার স্বামী মাদকাসক্ত ও অস্ত্র মামলার আসামী। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আমার বিরোধ লেগেই থাকে। গত মঙ্গলবার স্বামী আমাকে মারপিট করলে আরিফকে নিয়ে আমি আমার নানা সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের তালতলা এলাকার মৃত ইজ্জত আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেই।
বৃহষ্পতিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে নানার বাড়ি থেকে আরিফকে নিয়ে চলে আসে ইয়াছিন। পরে তার সঙ্গে আর মোবাইলে যোগাযোগ হয়নি। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে মোবাইল ফোনে খবর পাই আমাদের বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। তাৎক্ষণিক স্বজনদের নিয়ে বাড়িতে এসে জানতে পারি, ছেলেকে ঘরের মধ্যে হত্যা করে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে ঘরে আগুন দিয়েছে ইয়াসিন।
আরিফ বিল্লাহর দাদী মলুদা খাতুন জানান, ইয়াছিন তার ছেলেকে হত্যা করে ঘরে আগুন লাগিয়ে তার মামার বাড়ি আগরদাড়িতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে সে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই মারপিট করেছে। পরে স্থানীয়দের সহতায় ইয়াছিনকে ছিকল দিয়ে বেঁধে রেখে সদর থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
ধলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রোকন আল জামান জানান, আরিফ বিল্লাহ এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। এর আগে সে কয়েক পারা কোরআন মুখস্ত করেছিল। এঘটনায় অভিযুক্ত ইয়াসিন আলীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন রোকন আল জামান।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ নজররুল ইসলাম জানান, ঘাতক ইয়াসিন আলী একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তার নামে থানায় অস্ত্র ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে তার স্ত্রীর সাথে প্রায়ই ইয়াসিনের ঝগড়াঝাঁটি হত। একপর্যায় স্ত্রী তার শিশু ছেলে আরিফ বিল্লাহকে নিয়ে ধুলিহরে নানা’র বাড়িতে চলে যায়।
বৃহস্পতিবার বিকালে ইয়সিন নানা শ্বশুরবাড়ি থেকে আরিফকে ধলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। রাতে সে আরিফকে হত্যার পর ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আগুনে ছেলেটি মাথা ছাড়া শরীরের বাকি অংশ পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘাতাক পিতা ইয়াসিন আলীকে আটক করেছে। সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম, টিএ