খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জন নিহত
  নিখোঁজের ৪২ ঘণ্টা পর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী থেকে দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

সাকিবের কাছে কোটি টাকার বেশি পাওনার অভিযোগ কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাছে সাতক্ষীরার কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের এক কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছুদিন আগে তিনি কাঁকড়ার হ্যাচারী ছেড়ে দিলেও জমির মালিকদের হারি (ইজারার টাকা) ও ব্যবসায়িদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেননি। তার কাছে পাওনা ৩৩ লাখ টাকা না পেয়ে শোকে মারা গেছেন গুরু দাস নামের একজন ব্যবসায়ি। সাকিব আল হাসানের কাছে পাওনা টাকা আদায়ে পাওনাদাররা আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বিগত ২০১৬ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের দাতিনাখালি এলাকায় সড়কের ধারে গড়ে তোলেন একটি কাঁকড়া খামার। নাম দেন সাকিব আল হাসান এগ্রো ফার্ম। স্থানীয় ১০-১২ জন জমির মালিকের কাছ থেকে ব্যাৎসরিক হারির বিনিময় ইজারা নেন ৪৮ বিঘা জমি। সাকিব, তার বন্ধু পাভেল, ইমদাদসহ মোট চারজন খামারটি পরিচালনা করতেন। সাকিবের হ্যাচারীতে কাঁকড়া দিয়ে মাস শেষে টাকা নিতেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়িদের কাছ থেকে ছোট সফট সেল কাঁকড়া কিনে নিয়ে হ্যাচারীতে নার্সিংয়ের পর বড় করে বিদেশে রপ্তানি করতেন তারা। দেশবরণ্য ক্রিকেটার হওয়ায় জমির মালিক ও ব্যবসায়িরা পাওনা টাকার জন্য খুব বেশি তাগেদা করতেন না।

কিন্তু ২০২১ সালে খামারটি বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, কাঁকড়া হ্যাচারীতে সফট সেল কাঁকড়া নিলেও আজও অনেকের টাকা পরিশোধ করেননি হ্যাচারী মালিক ক্রিকেটার ও সদ্য বিলুপ্ত সংসদের আ’লীগের দলীয় সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। তার কাছে কোটি টাকারও বেশী পাওনা রয়েছে বলে দাবি করেছে পাওনাদাররা।

হ্যাচারী বন্ধ করে দেওয়ার পরে নানাভাবে চেষ্টা করেও সাকিবের হ্যাচারীতে পাওনা বকেয়া টাকা ফিরে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ী ও জমির মালিকরা। বছরখানেক আগে মাগুরায় সাকিব আল হাসানের বাড়িতে গেলেও মেলেনি টাকা। এসময় সাকিব আল হাসানের বাবা পাওনাদারদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। যদিও পাওনা টাকার রশিদ রয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে।

করোনাকালীন সময়ে সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া হ্যাচারী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জমির মালিকদের বছরে চুক্তির টাকা দিতেও গড়িমসি করে। তখন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন তারা।

এদিকে সাকিব আল হাসানের কাছে পাওনা ৩৩ লাখ টাকার শোকে মারা গেছেন শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ভামিয়া গ্রামের গুরু দাস। সাকিব আল হাসানের খামারেও যারা কাঁকড়া দিতেন প্রতিটি ব্যবসায়ীর এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

গুরু দাসের বাবা শান্তিরাম মন্ডল বলেন, আমার ছেলে হ্যাচরী মালিকের কাছে জমির হারি ও কাঁকড়া দেওয়া বাবদ ৩৩ লাখ টাকা পাবে। আমার ছেলেসহ কয়েকজন মাগুরায় গিয়েছিল হ্যাচারী মালিক সাকিবের বাবার কাছে টাকা নেওয়ার জন্য। কিন্তু টাকা চাইলে তিনি তাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বাড়িতে এসে টাকার শোকে আমার ছেলে খুবই ভেঙে পড়ে। একপর্যায় মারা যায় সে।

মৃত গুরু দাসের ছেলে অনিন্দ মন্ডল বলেন, কাঁকড়া বাবদ আমার বাবার কাছে অনেকে টাকা পেতো। তারা প্রায়ই আমাদের বাড়িতে টাকা নিতে আসতো। অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করতেন তারা। এসব কারণে আমার বাবা ডিপ্রেশনে ভুগতেন। কিছুদিন পরে তিনি মারা যান।

পোড়াকাটলা গ্রামের বৈশাখী মন্ডল বলেন, আমরা সাকিব আল হাসানের কাছে টাকা পাবো। সেতো অনেক ধনী ব্যক্তি। তিনি যদি আমাদের টাকা গুলো দিয়ে দিতেন তাহলে আমরা আমাদের দায়দেনা পরিশোধ করতে পারতাম। অনেক চাষীদের কাছ থেকে বাকিতে সফট সেল কাঁকড়া কিনে এনে সাকিব আল হাসান এগ্রো ফার্মে দিতেন। বাকি টাকা দিতে না পেরে দেনার দায়ে অনেকে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

একই এলকার রেনু বালা মন্ডল বলেন, আমরা প্রায় শতাধিক ব্যক্তি হ্যাচারী মালিকের কাছে কোটি টাকার বেশি পাবো। হ্যাচারী বন্ধ করে দেওয়া হলেও আমাদের পাওনা টাকা এখনো আমরা পাইনি। আমাদের টাকা গুলো দিয়ে দিলে আমরা খেয়ে পরে বাঁচতে পারতাম। তিনি সাকিব আল হাসানের ফার্মের সম্পত্তি বিক্রি করে ওই টাকা পাওনাদারদের মধ্যে সমভাবে ভাগ করে দেওয়ার জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

জমির মালিক দাতনেখালি গ্রামের মহর আলী কয়াল জানান, ইজারা নিয়ে আমাকে না জানিয়ে অবৈধভাবে আমার জমির উপর বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চুক্তিপত্রে সেটা উল্লেখ ছিল না। খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে এখন আর কেউ থাকে না। এমনকি হ্যাচারীর সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন আমার জমি ফেরত দিচ্ছে না আবার জমির হারির টাকাও পাচ্ছি না। হারির টাকা ও জমি ফেরত না পেয়ে দুই বার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জমির মালিক শহিদুল্লাহ গাজী । তিনি দ্রুত তার জমি ফেরত পাওয়ার দাবি জানান।

এই বিষয়ে শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তাইজুর রহামান বলেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাছে কেউ টাকা পাবে এমন অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

বর্তমানে সাকিব-আল-হাসান দেশের বাইরে থাকায় হ্যাচারীতে সফট সেল কাঁকড়া দেওয়া পাওনাদারদের বিষয়ে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!