খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডেও কমছে না ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা

নিপা মোনালিসা

দেশে একের পর এক নারী-শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বেড়েছে তাদের প্রতি সহিংসতামূলক বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা। খুলনাতেও এর সংখ্যা কম নয়। আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তনে মৃত্যুদন্ডের বিধান এনেও কমছে না এসব সহিংসতা।

এর মূল কারণ হিসেবে সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক শিক্ষা এবং নৈতিকতার অবক্ষয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা, বিচারকার্যে বিলম্বনা, ক্ষমতাশীলদের দৌরাত্ম, মাদকের অধিকতর ব্যবহার এবং সহজলভ্যতা সহ নানান বিষয়কে দায়ী করছেন অনেকেই। তাই শুধু কাগজে কলমে নয় দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারকার্য শেষ করে নতুন আইনের বাস্তবায়নের দাবি ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের।

গত এক সপ্তাহে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় খুলনাতেও বেড়েছে নারীশিশু ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতা। বিশেষ করে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের কথা জেনেও কমছে না এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুখদাড়া এলাকায় ১২ বছরের এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সঞ্জয় শীল (৫০) নামে এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুবাদে চিকিৎসার নামে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় রোববার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। তবে ঘটনার তিনদিনেও আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে একই উপজেলার ঝিনাইখালি এলাকায় ১২ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ভিকটিমের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে দাদার বাড়িতে বসবাসকারী ওই শিশুকে হত্যার হুমকি দিয়ে প্রতিবেশী ট্রাক চালক ওজিয়ার রহমান (৪৫) প্রায়ই ধর্ষণ করতো। ঘটনাটি জানাজানি হলে সোমবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিলো।

আবার শনিবার দুপুরে ডুমুরিয়া থানার বানিয়াখালি এলাকায় ১১ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ডুমুরিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে সোমবার বিকেলে তাকে খুমেকের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। তবে এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। অভিযুক্ত ধর্ষককেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

গত ২৬ অক্টোবর খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নী শেখপাড়া এলাকায় একই বাড়ির দুই শিশুকে খাবারের লোভ দেখিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগে হিরু মিয়া (৫০) নামের এক মাহেন্দ্রা চালককে আটক করে পুলিশ।

এদিকে এসব ঘটনায় ভুক্তভোগিদের অনেকেই পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। অনেকেই অর্থের অভাবে মামলা চালাতে ভয় পাচ্ছেন। লোকলজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না অনেকেই। মানসিকভাবেও অনেকটা ভেঙে পড়ছেন তারা। অপরাধী বা ক্ষমতাশীলদের দ্বারা অনেকেই হুমকির বা বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকারও হচ্ছেন।

মুজগুন্নী শেখপাড়া এলাকায় ধর্ষণের শিকার এক শিশুর মা জানান, তার মেয়েটি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। অনেকটা মানসিক দুঃচিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এদিকে অপরাধীরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে হেনস্তা করার জন্য এলাকায় নানান মিথ্যা প্রচার করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে নারী নেত্রী এড. শামীমা সুলতানা শীলু বলেন, একজন অভিযুক্তকে শাস্তি পাইয়ে দেওয়ার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি সেটা হচ্ছে উপযুক্ত প্রমাণ। ধর্ষণের মত ঘটনায় যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে আলামত সংগ্রহ করা সম্ভব না হয়, যদি আলামত দেওয়ার পরও সুষ্ঠু রিপোর্ট পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে সঠিক বিচার আশা করা যায় না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি সংকট সমস্যা দীর্ঘদিনের। যদি ডাক্তার বা যন্ত্রপাতি ঠিক না থাকেসেখান থেকে সুষ্ঠু রিপোর্ট পাওয়া মুশকিল। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সংকট সমাধানের দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাদকের অধিকতর ব্যবহার এবং এর সহজলভ্যতার কারণেই এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার না হওয়া, ক্ষমতাশীলদের দৌরাত্ম এগুলোও অনেকাংশে দায়ী।

তিনি বলেন, এসব অপরাধ কমাতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করে উপযুক্ত শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর প্রশাসনকে আরও তৎপর থাকতে হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত মানুষের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও পারিবারিক শিক্ষার অভাব এবং বিচার কার্যের দীর্ঘসূত্রতার কারণেই এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। খুলনার তিনটি আদালতে প্রায় ৬শ’র বেশি ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা এবং গণধর্ষণ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া নারী নির্যাতন সংক্রান্ত প্রায় ৬ হাজারের বেশি মামলা বিচারধীন। এসব মামলার বিচার কার্য যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায় তাহলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। তাই শুধু কাগজ-কলমে মৃত্যুদন্ডের বিধান সীমাবদ্ধ থাকলে সমাজ বা দেশে অপরাধ কমবে না।

উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীতে নীতিগত অনুমোদন দেন মন্ত্রিসভায়। আর ১৩ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২০ জারির বিষয়টি জানান। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, আইনের ধারা ৯ (১) এ উল্লিখিত ‘যাবজ্জীবন কারাদন্ড’র পরিবর্তে ‘মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড’ করা হয়েছে। এর আগে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদন্ড।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!