এপ্রিলের শুরুতে যখন সারা দেশ করোনা আতংকে ভীত সন্ত্রস্ত, এর তীব্রতা আর চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ দুরে থাক চিকিৎসকরাই যখন ছিলেন অন্ধকারে, তখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালকের দায়িত্বগ্রহণ করেন ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে যখন তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্ব নেন, তখন হাসপাতালটিকে খুলনা বিভাগের করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হয়েছে । এর মাধ্যমে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রমাণ দেন তিনি।
খুলনায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে বাসায় স্ব-শরীরে গিয়ে তার সাথে দেখা করে নিজে চিকিৎসা দিয়েছিলেন খুমেক হাসপাতালের পরিচালক। ”সহযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে আমারই আগে রোগীর সেবা করতে যাওয়া উচিত। এতে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের মনোবল বৃদ্ধি পাবে। আর এতে সহকর্মীদের আগে আমার মৃত্যু হলেই খুশি হব।” এমনটাই বলেছিলেন তিনি।
ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার গত ২ এপ্রিল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব নেন। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই ৭ তারিখের মধ্যে খুলনায় করোনা ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ৭ এপ্রিল থেকেই শুরু হয় করোনা পরীক্ষা। তবে তার সব থেকে বেশি কৃতিত্ব একটি হাসপাতালের সকল সেবা চালু রেখে একই জনবল দিয়ে পূর্ণাঙ্গ আরও একটি হাসপাতাল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।
১৩ এপ্রিল নগরীর করীমনগর এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মকর্তার করোনা শনাক্ত হলে হই চই পড়ে যায় পুরো খুলনায়। চাপা আতংক বিরাজ করছিল সর্বত্র। সেই রাতেই তিনি নিজে পিপিই পরে করোনা আক্রান্ত ওই রোগীর বাসায় যেয়ে তার সাথে দেখা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। তখন বিষয়টি আলোচনায় আসে সর্বত্র। ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার এরপর থেকে আর বসে থাকেননি। ছুটে চলেছেন দিন-রাত। করোনা রোগীদের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে সেবা দিয়েছেন গ্রীণ ও ইয়োলো জোনের রোগীদেরও । চাকুরী জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হওয়ায় তার সহকর্মী হাসপাতালের অন্য চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারীরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
সারাদেশে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের বাইরে যেয়েও অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেছে বেশিরভাগ হাসপাতাল। তবে এক্ষেত্রে একদমই ব্যতিক্রম ভূমিকায় ছিলেন ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার। পরিচালক হিসাবে যোগদানের পর থেকে করোনার যাবতীয় খরচ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ ফেরত দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন।
ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার ১৯৮৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। চাকুরি জীবনে ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালক, কুষ্টিয়া ম্যাটস-এর অধ্যক্ষ এবং সর্বশেষ ঝিনাইদহ সরকারি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার বলেন, অতীতে যেখানেই চাকুরী করেছি, সেই হাসপাতালকেই মডেল হাসপাতালে পরিণত করে পুরস্কার পেয়েছি। খুমেক হাসপাতালে হয়তো আমাকে এই জন্যই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতালটিকে একটি জনবান্ধব হাসপাতালে পরিণত করতে সার্বক্ষণিক চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনার এই মহামারীতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য চাকুরী জীবনের শেষ দিনগুলি পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান তিনি।
খুলনা গেজেট /এমবিএইচ/ এমএম