সরকারের ভর্তুকি দেওয়া কম্বাইন হারভেস্টার খুলনার দাকোপে একটি চক্র বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্রের নামে বেনামে রয়েছে একাধিক কম্বাইন হারভেস্টার। আর কৃষি অধিদপ্তরের কতিপয় দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা এ কাজে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই চার বছরে এই উপজেলায় মোট ৩২টি কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে। সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন সহায়তায় এ কৃষি যন্ত্র সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকার এসিআই কোম্পানির কম্বাইন হারভেস্টারে প্রতি কৃষক সরকারি ভর্তুকি পেয়েছেন ২১ লাখ ১৪ হাজার ও উত্তরন কোম্পানির হারভেস্টারে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু যারা এই হারভেস্টার গাড়িগুলো পেয়েছেন তারা অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও নাম মাত্র কৃষক।
এটি ডিজেল ইঞ্জিন চালিত এমন একটি যন্ত্র যা দিয়ে ধান ও গম একই সাথে কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাভর্তি করা যায়। শস্য সংগ্রহের প্রধান এই চারটি কাজ একই সঙ্গে করা যায় বিধায় যন্ত্রটির নাম কম্বাইন হারভেস্টার বলা হয়ে থাকে। সনাতন পদ্ধতিতে কাঁচি দিয়ে শস্য কাটার তুলনায় অল্প সময় ও কম খরচে ধান ও গম কাটা যায়। ফলে সময় ও কায়িক শ্রম লাঘব হয় বিধায় এই অঞ্চল থেকে উত্তর অঞ্চলে এই হারভেস্টারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই কথিত ব্যবসায়ী ও নাম মাত্র কৃষকরা নানা কৌশলে কম্বাইন হারভেস্টার গাড়িগুলো বাগিয়ে নিয়ে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করেছেন বলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে।
এছাড়া উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সাথে কম্বাইন হারভেস্টার ক্রেতার চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে উন্নয়ন সহায়তার আওতায় ক্রয়কৃত যন্ত্র কমপক্ষে ৩ বছরের মধ্যে হস্তান্তর যোগ্য নহে। হস্তান্তর করা হইলে দ্বিতীয় পক্ষ (ক্রেতা) নির্ধারিত উন্নয়ন সহায়তার অর্থ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। তা ছাড়া দ্বিতীয় পক্ষ উপজেলা কৃষি পূর্নবাসন কমিটিকে যে কোন সময় যন্ত্রটি দেখাতে বাধ্য থাকবে। দ্বিতীয় পক্ষের হেফাজতে থাকা যন্ত্র প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে কিংবা যন্ত্রটি কৃষি কাজে ব্যবহৃত না হলে তার বিরুদ্ধে প্রথম পক্ষ (উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর) আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু চুক্তিপত্রের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কাই করা হয়নি বলে এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ।
কালিকাবাটি এলাকার অপূর্ব সরকার জানান, আমার নিজের নামে একটা ও ভাই বন্ধুর নামে আরো দুইটি কম্বাইন হারেভেস্টার নিয়েছি। গাড়ি ৩টি এখন কিশোরগঞ্জে ভাড়ায় চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় বলেন, যারা কম্বাইন হারভেস্টার গাড়িগুলো পেয়েছে তারা ভাড়ায় চালানোর নামে উত্তর অঞ্চলে বিক্রি করেছে। কারণ গাড়িগুলো এলাকায় দেখা যায় না। আর এ সরকারি ভর্তুকি দেওয়া গাড়িগুলো বিক্রি করে তারা চরম অপরাধ করেছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। আর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কতিপয় দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা এ কাজের সহযোগিতায় জড়িত থাকতে পারে বলে আমার ধারণা। তদন্ত কমিটি করে বিষয়টির সঠিক তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আমি কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। কোন অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
খুলনা গেজেট/এনএম