খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  খা‌লিশপু‌রের হা‌সিবুর হত্যায় ২১ জনের যাবজ্জীবন, খালাস ৫

সরকারি নির্দেশনার প্রথমদিনে খুলনায় গণপরিবহনের চিত্র ছিল যেমন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে করোনা সংক্রামণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সরকার যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা খুলনায় গণপরিবহনে প্রথমদিন সকল রুটে যথাযথভাবে মানতে দেখা যায়নি। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা অনেকেই মানেনি। কোনো কোনো রুটে গাদাগাদি করে বাসে লোক বহনের চিত্রও ছিলো দৃশ্যমান।

আজ সকাল সাড়ে এগারোটায় কথা হচ্ছিলো খুলনা-পাইকগাছা রুটের বুলবুল ক্লাসিকের কন্ট্রাক্টর তাপস এর সাথে। চল্লিশ সীটের গাড়িতে গাদাগাদি করে লোক নিয়েছেন তিনি। সেই সাথে পরিবহনের চালক ও অধিকাংশ যাত্রীর মুখেই ছিলো না মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা ও বর্ধিত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়নি, কাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়ার নির্দেশনা কার্যকর করা হবে।

খুলনা-সাতক্ষীরা রুটের বাসগুলো ফাঁকা ফাঁকা ভাবে যাত্রী নিয়ে সোনাডাঙ্গা টার্মিনাল ছাড়লেও জিরো পয়েন্টে যেতেই পরিবহনগুলোর ভেতরের চেহারা পরিবর্তন হতে থাকে। অপরিবর্তীত ভাড়া নিয়ে আগের নিয়মেই আসনের অধিক যাত্রী পরিবহন করছে তারা এবং স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা করছেন না যাত্রীরা। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে পরিবহনের চালক মোঃ বেল্লাল হোসেন বলেন, এখনো পর্যন্ত খুলনা বিভাগীয় মালিক সমিতি থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি। তবে নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী পরিবহন পরিচালনা করবেন তিনি।

এদিকে খুলনা-গোপালগঞ্জ রুটের জিরো পয়েন্টের বাস কাউন্টারে টিকেটের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলেও যাত্রী বসানোর ক্ষেত্রে দুই সিটে একজনের পরিবর্তে দুই সিটে দু’জনই যাত্রী পরিবহন করছেন তারা।

খুলনা-গোপালগঞ্জ রুটের খান ক্লাসিকের যাত্রী আবু সাইদ জানান, গোপালগঞ্জে আগের ভাড়া ছিলো ১০০ টাকা কিন্তু আজকে তার কাছ থেকে সরকারী নির্দেশনার কথা বলে ১৬০ টাকা আদায় করা হয়েছে। তবে দুই সিটে একজনের বসার কথা থাকলেও তার পাশের সিটে বাসের স্টাফ পরিচয়ে একজন যাত্রীকে বসানো হয়েছে।

তবে ভিন্ন ছিলো খুলনা-মাদারীপুর রুট ও খুলনা-কুষ্টিয়া রুটের গড়াই, রূপসা পরিবহন কাউন্টারের চিত্র। যাত্রী পরিবহন ও ভাড়ার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবহন পরিচালনা করছেন তারা।

খুলনা-মাদারীপুর রুটের ইমা স্পেশাল এর কন্ট্রাক্টর ফারুক জানান, খুলনা থেকে মাদারীপুরের ভাড়া গতকাল ছিলো ২৫০ টাকা, আজ তারা ৩৫০ টাকা নিচ্ছেন। এছাড়া খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ’র ভাড়া ১১৭ থেকে ১৬০ টাকা, খুলনা থেকে টেকেরহাটের ভাড়া ১৮০ থেকে ২৮৮ টাকা নিচ্ছেন তারা। তিনি আরো জানান, শুধুমাত্র একই পরিবার বা স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে পাশাপাশি সিট দিচ্ছেন তারা, এ বাদে দুইটি আসনে একজন করে যাত্রী পরিবহন করছেন।

খুলনা-কুষ্টিয়া রুটের গড়াই পরিবহনেও একইভাবে নির্দেশনা মান্য করা হচ্ছে। খুলনা-যশোর রুটে গতকাল পর্যন্ত ৮৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও আজ থেকে ১৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। সেই সাথে খুলনা থেকে ঝিনাইদহের ভাড়া ১৫০ থেকে ২৩০ টাকা, খুলনা-কুষ্টিয়া ২৩০ থেকে ৩৩০ টাকা গ্রহণ করছে তারা। গড়াই পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার জানান, সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনেই তারা পরিবহণ পরিচালনা করছেন। তবে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি অনেক যাত্রী না জানার কারণে বাকবিতন্ডায় জড়াচ্ছেন তাদের সাথে।

এদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি না জানার কারণে বাসস্ট্যান্ডে এসে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের অনেক যাত্রী। সকাল ১০টা থেকে দিনমজুর মজিবুল দাড়িয়ে আছেন খুলনার জিরো পয়েন্টের খুলনা-পিরোজপুর বাস কাউন্টারের সামনে। সাথে আরো ৬ জন সদস্য নিয়ে যাবেন বরিশালের ছারছিনা এলাকায় মাটি কাটার কাজে। কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ায় পকেটে বাড়তি ভাড়ার টাকা না থাকায় তখনো পর্যন্ত বাসে উঠতে পারেননি তারা।

পাশেই দাড়ানো ইটভাটার শ্রমিক আবু সাইদেরও একই অবস্থা। তিনিও দুই জন নারী শ্রমিক নিয়ে সকাল ১০টা থেকে দাড়িয়ে আছেন জিরোপয়েন্টের খুলনা-পিরোজপুর কাউন্টারের সামনে। তিনি জানান, সকালে পাইকগাছা থেকে খুলনায় এসেছেন আগের ভাড়া দিয়েই, কিন্তু এখানে এসে শুনছেন ভাড়া বেড়েছে ৬০ শতাংশ। যে কারণে আগের ভাড়া নিয়েই ঘন্টা খানেক দাড়িয়ে থেকেও কোনো বাসে উঠতে পারেননি তিনি।

অনেক পরিবহনের চালক বলছেন, তারা করোনার কারণে সরকারি নির্দেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। কিন্তু অধিকাংশ সিএনজি, মাহেন্দ্রা ও মাইক্রো অবৈধভাবে হাইওয়েতে যাত্রী পরিবহন করছে।

গণপরিবহনের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা সঠিক ভাবে পালন না হওয়ার কারণগুলো জানতে খুলনা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির কার্যকরী সদস্য আবুল কালাম আজাদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সরকার পরিবহন সম্পর্কে যে সমস্ত নীতিমালা প্রদান করেছে আজ দুপুরে আমরা মিটিং করে এ সকল বিষয় আমাদের শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছি। গাড়ির যাত্রী, চালক, হেলপার, কন্ট্রাক্টর সকলের জন্য মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ না করার বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। সরকারের সকল নির্দেশনা এখন থেকেই বাস্তবায়ন করা শুরু হয়ে গেছে। তবে আগামীকাল থেকে পরিপূর্নভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

গণপরিবহনের শ্রমিকদের করোনা ঝুঁকি ও স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি পরিবহন শ্রমিকদের। তবে এখনো পর্যন্ত খুলনায় কোনো পরিবহন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়নি। পরিবহন শ্রমিকরা যেন সরকারি সকল নির্দেশনা মেনে চলে সেজন্য মাইকিং করা হয়েছে। কালকেও সারা টার্মিনাল এলাকায় মাইকিং এর ব্যবস্থা থাকবে, যাতে করে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক সকলে সচেতন হতে পারেন।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!