সাতক্ষীরা পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি ও রাস্তাঘাট-ড্রেনেজসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে শনিবার (২২ জুলাই) বেলা ১১টায় জেলা নাগরিক কমিটির এক সভা সংগঠনের নিজস্ব কার্যলয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পৌরসভার বিরাজমান সমস্যা সমাধানে পৌর কতৃপক্ষকে নাগরিক সংলাপ আয়োজনের আহবান জানান নাগরিক নেতৃবৃন্দ।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সুধাংশু শেখর সরকার, আনোয়ার জাহিদ তপন, মাধব চন্দ্র দত্ত, শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু, লায়লা পারভীন সেঁজুতি, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, ইদ্রিস আলী, আবুল হোসেন, জোৎন্সা দত্ত, নিত্যানন্দ সরকার, কওসার আলী, আব্দুস সামাদ, এড. আবুল কালাম আজাদ, আলী নুর খান বাবলু প্রমুখ।
সভায় বলা হয়, আধুনিকমানের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত উন্নত নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে সাতক্ষীরা পৌরসভার গৃহীত পদক্ষেপগুলো খুবই দুর্বল। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সাতক্ষীরা পৌরসভা দ্রুত বস্তি-ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হচ্ছে। পৌরসভার একমাত্র নিউ মার্কেটটি ভেঙে ফেলার পর ৫ বছর অতিবাহিত হলেও আজও নতুন করে তা নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পৌরসভার মিনি মার্কেটটিও ক্রমশঃ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পৌর সভায় কোন পাবলিক অডিটরিয়াম, মিলনায়তন ও কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ব্যাহত হচ্ছে। শহরের শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে মানুষের অবসর বিনোদনের কোন পরিবেশ নেই। নেই কোন শিশু পার্ক। আগে থাকলেও এখন পাবলিক টয়লেট, ডাসবিন, রাস্তার পাশের পানির ট্যাপগুলো আর নেই। অধিকাংশ রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী। যানজট নিরসনে রাস্তায় ট্রাফিক দাড়ানোর জায়গা নেই। চিংড়ি পোনা, কাঠের ফার্নিচার, ইট-বালুর ব্যবসাসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বসার কোন নির্ধারিত স্থান না থাকায় এবং পৌরসভার তত্ত্বাবধায়নে হকার্স মার্কেট গড়ে না ওঠায় শহরের যত্রতত্র যেখানে সেখানে এসব ব্যবসায়ীরা বসে ব্যবসা করছেন। ফলে তারা যেমন সুষ্ঠভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না, পক্ষান্তরে শহরে যানজটসহ নানা ধরনের জনভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সুলতানপুর বড়বাজার এবং ইটাগাছা সান্ধ্য হাটের অস্তিত্ব এখন বিলুপ্ত প্রায়। এরফলে মাছ তরিতরকারীসহ কাঁচা মালের ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বসতে বাধ্য হচ্ছেন।
সভায় আরো বলা হয়, সড়কে চলাচলে আগে ব্যবহৃত ফুটপাথগুলো দখল করে নতুন নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে। সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মিত হওয়ার পর গত ১০ বছরেও লিংক রোড গুলো ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। শহরের মধ্যে অবস্থিত সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের পূর্ব পাশের প্রাণসায়র খাল লাগায়ো সড়কের সাথে বিভিন্নস্থানে একাধিক গলিপথ থাকলেও সেগুলো প্রধান সড়কের লিংক রোডে পরিণত করা হয়নি। প্রাণসায়র খালের উপর আরো কয়েকটি স্থানে ব্রীজ নির্মাণ করে দু’পারের সড়কের সাথে সংযোগ স্থাপনেরও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে যানজট এখন সাতক্ষীরা শহরের মানুষের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
এছাড়া গত দুই-তিন দশকে সাতক্ষীরা পৌরসভার রথখোলার বিল, মেহেদীবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, ইটাগাছা পশ্চিমপাড়া, কামালনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় শহর সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার সুদুর প্রসারি কোন পরিকল্পনা না থাকায় যত্রতত্র নগরায়নের ফলে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্সসহ রিকসা-ভ্যান যাতায়াতের মত কোন রাস্তা রাখা হয়নি। ড্রেনেজ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ ধরনের হাজারো সমস্যায় জর্জরিত সাতক্ষীরা পৌরসভার মানুষ।
সভায় বলা হয়, সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণের সময় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সচেতন নাগরিকদের পরামর্শ না নেওয়ার ফলে ছোট ছোট সমস্যাগুলো এখন অনেক বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এমন কি বিভিন্ন সময়ে উপযাচক হয়ে দেওয়া পরামর্শগুলোও বারবার উপেক্ষিত হয়ে এসেছে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ পৌর কতৃপক্ষকে দ্রুত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতকরণসহ বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা সমাধানে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সচেতন নাগরিকদের মতামত গ্রহণে নাগরিক সংলাপ আহবানের অনুরোধ জানানো হয়। সভায় সাতক্ষীরা পৌরসভার পানির বিল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগীত করায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সভায় সাতক্ষীরার ভূমিহীন আন্দোলনের শহিদ জায়েদার ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রয়াত নেতৃবৃন্দের স্মরণে আগামী ২৯ জুলাই মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ