সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির তালিকায় ব্যবসায়ি ও বিত্তশালীদের নাম অর্ন্তভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজের লোকদের তালিকায় না রাখতে গিয়ে বাদ পড়েছে প্রকৃত হকদার অনেক দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের সদস্যরা। এমনি কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর একজন সরকারি কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ঈশ্বরীপুর গ্রামের নুর হোসেন মোড়লের ছোট ছেলে ফজলুর রহমান থাকেন ইতালী। অপর ছেলে নূরজ্জামানের স্থানীয় বাজারে রয়েছে বিশাল ব্যবসা। দালান বাড়িতে বসবাসকারি পিতা-পুত্র দু’জনেরই নাম উঠেছে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির তালিকায়। একই তালিকায় জায়গা হয়েছে তাদেরই প্রতিবেশী পাকা ভবন আর জায়গা জমির মালিক স্বচ্ছল আব্দুর রহিমের। অথচ একই গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় নারী জাহানারা বেগম ও নদীর পাড়ে বসবাসকারী ভূমিহীন ইউসুফ আলীর নাম বাদ পড়েছে নতুন তালিকা থেকে। আবার দিনমজুর আবুল কালামের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির সদ্য নিবন্ধিত তালিকায়। মুলত স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বিরাগভাজন হওয়ায় বাদ পড়েছেন জাহানারা ও ইউসুফসহ অন্যান্যরাঅ অন্যদিকে কর্তাব্যক্তিদের সুনজরে থাকায় বিত্তশালী হয়েও তালিকাভুক্ত ভাগ্যবানের কাতারে নাম উঠেছে নুর হোসেনদের। গরীব, অসহায় এবং দুস্থদের জন্য সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির এ তালিকা শ্যামনগর উপজেলার ঈশ^রীপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের।
একইভাবে উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কনিকা মন্ডল, নিত্যানন্দ, গুনধর ও প্রদীপসহ অসংখ্য স্বচ্ছল ব্যক্তির জায়গা হয়েছে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির তালিকায়। যদিও কাঁচড়াহাটি আর নন্দীগ্রামের তরুলতা, রাধাকান্তসহ রবীন্দ্র মন্ডলের মতো অনেক দিনমজুরের নাম নেই ভাগ্যবানদের তালিকায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ বিগত নির্বাচনে সমর্থন না করাসহ চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় তাদের নাম তালিকায় রাখা হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তাদের নিযুক্ত এজেন্ট নিজেদের খেয়াল খুশিমত তালিকা তৈরী করায় প্রকৃত দুস্থঃ ও অসহায় পরিবারের অনেকে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
অপরদিকে ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লুৎফর রহমান ও শহীদ মল্লিক জানান তারা নিঃস্ব অসহায় হওয়া সত্তে¡ও নুতন তালিকায় জায়গা মেলেনি তাদের। ইউপি সদস্যের চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় তাদের কপাল পুড়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। বিত্তশালী অশোক মন্ডলসহ কয়েকজনের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন দিনমজুর মোশারফ হোসেন ও আব্দুর রশিদসহ স্থানীয়রা।
শ্যামনগরে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির নুতন তালিকা নিয়ে এমন অনিয়ম শুধুমাত্র ঈশ্বরীপুর আর ভুরুলিয়া ইউনিয়নে সীমাবদ্ধ নয়। উপজেলার গাবুরা, কাশমাড়ী, মুন্সিগঞ্জসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোতে তালিকা প্রস্তুতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের জায়গা দেয়ার বিপরীতে দুস্থঃ অসহায়দের উদ্দেশ্যমুলকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে ভুক্তোভোগীরা ইতোমধ্যে উপজেলার কাশিমাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গাবুরাতে মানববন্ধন করেছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার অনেক দুস্থঃ আর অসহায় ব্যক্তি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
দুস্থঃদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছলদের তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে ঈশ্বরীপুরের ৫নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এম সফিউল্লাহ জানান, কার্ড কম থাকায় প্রথম অবস্থায় সবাইকে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। কিন্তু ব্যবসায়ী ও পাকা ভবনের মালিকদের তালকাভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কাশমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আনিছুজ্জামান জানান, টাকার বিনিময়ে কাউকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। কয়েকটি ওয়ার্ডে পুর্বেকার সুবিধাভোগীরা তালিকায় নাম না থাকার ঘটনায় নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন জানান, কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর একজন সরকারি কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রকৃত দুস্থঃ বা অসহায় মানুষকে বাদ দিয়ে বিত্তবানদের সুবিধাভোগীর তালিকাভুক্তির প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্টদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/ টি আই