২০২১ সালের ২৪ মে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সরকারি খাস জমির উপর তড়িঘড়ি করে ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্য দিয়ে খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শুরুর পর আশার আলো দেখে খুলনাবাসী। আশা ছিল দ্রুতই কাজ শেষ হলে সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াতের। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। স্বপ্নভঙ্গ হল খুলনাবাসীর।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয় ২০২৪ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত। কাজ শুরুর তিন বছরের মাথায় ২০২৪ সালের মে থেকে দ্বিতীয় দফায় অনেকটা নাটকীয়ভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন কবে নাগাদ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে, এ নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এস এম নাজমুল খুলনা গেজেটকে বলেন, দ্বিতীয় দফায় ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। সাড়ে তিন বছরে কাজের অগ্রগতি ১৫ শতাংশ। ২৮ টি পিলারের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ২০ টি’র। দীর্ঘ ৮ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৮ নং পিলারের পাইল ক্যাপের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হলেও কাজের গতি খুবই মন্থর।
২৯ ডিসেম্বর সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৮ নং পিলারের পাইল ক্যাপ ঢালাইয়ের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৮/১০ জন শ্রমিক কাজ করছে।
সেতুর কাজের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. আজিজুর রহমান আকাশ বলেন, পাইল ক্যাপ ঢালাইয়ের ২৫ টন রডের কাজ হবে। এরপর অন্য পিলারের কাজ করবো আমরা।
ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ নিয়ে শুরু থেকেই চলছে নানা নাটকীয়তা। ডিজাইনে জটিলতা রেখেই অনেকটা তড়িঘড়ি করেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু হওয়ার ৩ বছর পর এসে ডিজাইন পরিবর্তন। এখন স্টিল সেতুর পরিবর্তে হবে কংক্রিট স্ট্রাকচারের সেতু। এক লেনের পরিবর্তে হবে দুই লেন। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার সাড়ে তিন বছর পরও সেতুর শহরাংশে রেলীগেট থেকে দৌলতপুর মুহসিন মোড় পর্যন্ত রেলের জমি অধিগ্রহণের এখনও কোন সূরাহা হয়নি।
এদিকে নির্মাণ সামগ্রির মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির বিবেচনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজেও অনেকটা গাফিলতি দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর কি দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির উপর ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ।
বর্তমান নকশা অনুযায়ী ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০টি। এর মাধ্যমে সেতুর শহরাংশে কুলিবাগান হতে রেলিগেট ভৈরব নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে। সেতুর রেলিগেট প্রান্তে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে নদী পার হতে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। শুরুতে এই দুই পিলারের উপর স্টিলের সেতু বসার সিদ্ধান্ত থাকলেও সেটি পরিবর্তন করে এখন হবে কংক্রিটের সেতু। এক লেনের পরিবর্তে হবে দুই লেন।
প্রসঙ্গত, ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকী টাকা সেতু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে।
খুলনা গেজেট/ টিএ