খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৯ জুন, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ভালুকায় বালুবোঝাই ট্রাকে পরিবহনের ধাক্কায় বাসচালক নিহত
  চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১

শীতের বাতাসে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালি মুকুল

আজিজুর রহমান

চলছে মাঘ মাস। বাতাসে এখন শীতের গন্ধ। ফাল্গুন আসতে এখনও সপ্তাহ দুয়েক বাকি। এরই মধ্যে খুলনার কিছু কিছু গাছে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। সামান্য দৃষ্টি নিক্ষেপেই চোখে পড়ে মুকুলে ছেয়ে আছে অসংখ্য আমগাছ। এভাবে ফাগুনের আগেই গাছে গাছে প্রস্ফুটিত আমের মুকুল সর্বত্র ছড়াচ্ছে হাল্কা স্বর্ণালি আভা।

আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, মাঘের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল দেখে তারা বুঝছেন, আমের মৌসুম এসে যাচ্ছে। বাগানের গাছগুলোর যত্ন নিতে পরিশ্রম শুরু করে দিয়েছেন। ভাল ফলনের আশায় জোরে শোরে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। খুলনা নগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে এখনও শীতের আমেজ বিরাজ করলেও আগাম জাতের আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে।

এবার তীব্র শীতের শেষে বসন্ত আসবে। তার আগে গাছে গাছে ফুটেছে নানান রঙের ফুল। আমগাছের শাখাগুলো ভরা উজ্জ্বল সোনালি মুকুল যেন আকাশের বুকে ডানা মেলে দিয়েছে। দালানে ঠাসা এই স্বল্পবৃক্ষের খুলনা শহরে মুকুলে ছেয়ে যাওয়া আমগাছগুলো আলাদা শোভা ছড়িয়েছে। সবুজ পাতার কিনার ছাপিয়ে ওঠা মুকুলের সোনালি রেণু যেন ফুলশয্যা সাজিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বসন্তকে।

নগরের খালিশপুর এলাকার বেসরকারি একটি কোচিং সেন্টারের সামনে আমের মুকুল শোভা ছড়াচ্ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে দাঁড়িয়ে খোশগল্পে মেতেছিলেন। খুলনা সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ-আল নোমান বললেন, ‘বছরের এ সময়ের প্রকৃতি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে। নগরজুড়ে হরেক রকমের ফুল ফোটে। আমের মুকুল বাতাসে দোল খায়। দেখলেই যেনো মনটা ভালো হয়ে যায়।’

এসব মুকুল অনেকের মনে শৈশবের স্মৃতি নাড়া দেয়। নিয়ে যায় ছোটবেলার সেই হারানো দিনগুলোর কাছে। টুটপাড়া পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব শেখ সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সাতক্ষীরায় আমার বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমের সঙ্গে বড় হওয়া। ঝড়ঝাপটা হলে বন্ধুরা মিলে ব্যাগ হাতে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটতাম আম বাগানে। এখন আর বাড়ি যাওয়া হয় না। আমের মুকুল দেখলে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো ফিরে আসে।’

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই আবহাওয়াগত ও জাতের কারণেই মূলত আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। গাছে গাছে আমের মুকুল। তারা বলেন, প্রতি বছরই কিছু আমগাছে আগাম মুকুল আসে। এবারও আসতে শুরু করেছে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে না পড়লে এসব গাছে আগাম ফলন পাওয়া যায়। আর আবহাওয়া বৈরী হলে ফলন মেলেনা। তবে নিয়ম মেনে শেষ মাঘে যেসব গাছে মুকুল আসবে সেসব গাছে মুকুল স্থায়ী হবে।

শহর ঘুরে সবচেয়ে বেশি আমের মুকুল দেখা গেছে, নিরালা, শের-এ-বাংলা রোড, বি কে রায় রোড, নর্থ খাল ব্যাংক রোড, খান জাহান আলী রোড, মুজগুন্নী, খালিশপুর ও দৌলতপুর এলাকার গাছগুলোতে। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে বেরিয়েছে ছোট ছোট আমগুটি।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘বেশ কিছু এলাকার গাছে গাছে ফুটছে ফুল, আগাম মুকুলে ছেয়ে গেছে আমগাছ। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে বেরিয়ে এসেছে ছোট ছোট আম। আবহাওয়া পরিবর্তন অর্থাৎ যে আবহাওয়াটা মুকুল হওয়ার জন্য দরকার সেটা আগেই পেয়েছে সেজন্য আগাম মুকুল এসেছে। এছাড়া আগাম জাতের গাছে আগাম মুকুল আসে’

তিনি আরও বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় ছোট বড় মিলে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির আম বাগানে বিভিন্ন প্রকারের আম রয়েছে’ তবে দিন দিন লাভের কারণে বাগান ও আমগাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

দৌলতপুর এলাকার আমচাষি মো. শফিকুল সরদার বলেন, ‘পুরাপুরি সকল গাছে মুকুল আসেনি। কয়েকদিনের মধ্যেই মুকুল আসবে। তবে তীব্র শীতে যেসব গাছে মুকুল এসেছে, তা থেকে ফল হবে কি না-এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

এছাড়া শহরের বাইরে পাইকগাছা, রূপসা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা, ফুলতলা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলায় শোভা ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। শীতের হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁকে গেলে দোল খাওয়া সোনাঝরা মুকুল মন ভালো করে দেয় নগরবাসীর। যা নগরের মানুষের মধ্যে বিলায় অন্য রকম আনন্দ।

নগরীর জোড়াকল বাজার এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আম গাছে আগাম মুকুল দেখে ভালো লাগছে বেশ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করছে।’

জানতে চাইলে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘আবহাওয়াগত ও জাতের কারণেই মূলত আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। প্রায় ২৫ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছে। আগামী মাসের মধ্যে সব গাছে মোটরদানার মতো আমের গুটি চলে আসবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে বাগান মালিক ও চাষিরা এবার লাভবান হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হালকা থেকে মাঝারি ধরণের কুয়াশা রয়েছে, এতে মুকুলের কোন ক্ষতি হবে না। মূলত কার্বোহাইড্রেট ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে মুকুলের ক্ষতি হয়।’ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিশেষ করে নিয়মিত জাত আম্রপালি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাত, আশ্বিনা ও হাইব্রীড জাতের গাছ বেশি লাগানো হচ্ছে।’

 

খুলনা গেজেট / এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!