খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ পৌষ, ১৪৩১ | ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  উড্ডয়ন করেছে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
  রাজধানীতে পঙ্গু হাসপাতালে আগুন
  গুম ও জুলাই গণহত্যায় জড়িত ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল
  ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ভারতে আছেন শেখ হাসিনা, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ, বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

গত বেশ কয়েকদিন ধরে সাতক্ষীরাসহ এর আশপাশ এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সাথে রয়েছে হিমেল ঠান্ডা বাতাস। এতে করে শীতের তীব্রতা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। এসময় ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়ষ্করা। চিকিৎসকদের মতে শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালসহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রচন্ড শীত ও কনকনে ঠান্ডায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের বেশির ভাগ হচ্ছে শিশু। তবে বৃদ্ধরাও রয়েছেন নানা সমস্যাতে। এছাড়াও হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা জ্বও, ঠান্ডা ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছরে হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ার কারণে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু। শীতে শিশুরা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসময় অনেক বাচ্চার অ্যাজমাও বেড়ে যাচ্ছে। তবে আক্রান্ত অনেক শিশুকে দেরিতে চিকিৎসকের কাছে আনা হচ্ছে। না বুঝে আগেই অভিভাবকরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় ফার্মেসির ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে অনেক শিশুর শারীরিক জটিলতা বাড়ছে।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনের বেশি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতালসহ রোগীর চাপ বেড়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও শহরের প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে। সাথে যুক্ত হয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভীড়। সবেচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ।

গত ১ সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধুমাত্র শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ৩০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৫ জন। ফলে ওয়ার্ডের অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমেনা খাতুন নামে এক নারী। তিনি বলেন, বাচ্চাটা কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা হচ্ছে যার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

আশাশুনি থেকে সামছুর নাহার নামের ছয় মাস এগারো দিন বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। মেয়েকে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে জ্বর হলে আমাদের ওখানকার গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।

এদিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৪টা বেডের বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৫ জন, যেটি বিগত ৭ দিন আগে ছিল ৭০ জন শিশু। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫টা বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৪ জন। যেটা বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এই প্রচন্ড শীতে রোগীদের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।

পাটকেলঘাটা থেকে এক বছর বয়সী ফাতিনকে নিয়ে এসেছেন তার মা তজমিন সুলতানা। তিনি বলেন, সাত-আটদিন ধরে ঠান্ডা, কাশি কিছুতেই কমছে না। এজন্য এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কাটিয়া থেকে আসা বৈশাখী নামের এক মহিলা তার ৭ দিনের শিশুকে নিয়ে। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মেরিনা সুলতানা বলেন, ঠান্ডা পড়ার কারণে আমাদের এখানে রোগীর চাপ প্রচন্ড বেশি। আমাদের এখানে ১৪টি বেডের বরাদ্দ আছে কিন্তু শিশু ভর্তি আছে ১৭ জনের বেশি। অধিকাংশ বাচ্চাদের সর্দি-কাশি জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট। গত কয়েকদিনে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৫ জন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ শান্তনা মন্ডল বলেন, এই কয়েক দিনের শীতের কারণে শিশু ডায়রিয়া রোগী বাড়তেই আছে। গত কয়েকদিনে ১২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। আমাদের এখানে ৫টা বেড বরাদ্দ আছে। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ২৫ জন। যার কারণে সব কিছু সামাল দিতে একটু ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. মো. আবুল বাশার আরমান বলেন, এই শীতে বাচ্চাদের সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এই ধরনের রোগ গুলো পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি এবং যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।

শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আশিক আহমেদ বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। শীতজনিত রোগের বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদী ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়। বিধায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যে কোনো ওষুধ সেবন না করার আহবান জানান তিনি।

সামেক হাসপাতালের পরিচালক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ খুদরত ই খুদা জানান, শীতে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বালাই বেড়ে যায়। এজন্য শীতে শিশুদেরকে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। বাসায় বড়দের কারো জ্বর-সর্দি -কাশি হলে তারা যেন মাস্ক ব্যবহার করেন। কারণ তারা যখন হাঁচি, কাশি দেবেন তা দ্বারা যেন শিশুরা সংক্রমিত না হয়। শীতে জ্বর, সর্দি-কাশি হলে বাচ্চাদের গলায় ইরিটেশন হচ্ছে। দুই বছরের বেশি বয়সি শিশুদের নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। যাদের অ্যাজমা আছে, শীতে তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শীতে শিশুদের ডায়রিয়ার ঝুঁকিও থাকে। শীতে শিশুরা যাতে পর্যাপ্ত পানি পান করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে তিনি অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানান।

সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। এই ঠান্ডার কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, শিশু ডায়রিয়া বেড়েই চলেছে। শিশু হাসপাতাল, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতেও ডাক্তাররা নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। শীতজনিত রোগের চিকিৎসা সেবা দিতে সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ আছে বলে জানান তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!