খুলনার ফুলবাড়িগেট কেডিএ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেডিএ খানজাহানআলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এটি একটি বিশেষায়িত বিদ্যালয়। এ জাতীয় বিদ্যালয় সারা দেশে মাত্র ৭টি নির্মিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশের রেকর্ড তৈরী করেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান মান এবং শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ তুলনামূলকভাবে খুবই প্রশংসনীয়। কিন্ত বর্তমানে শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
২০১৪ সালে ১ একর ৩০ শতক জায়গার উপর প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে বিশেষায়িত এ বিদ্যালয়টি নির্মিত হয়। প্রতিষ্ঠার ২ বছর পর ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২টি শাখা এবং ১০ম শ্রেণিতে একটি শাখায় বর্তমানে মোট ৫’শ ৯৪ জন ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়টিতে পড়াশুনা করছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকের পদসহ ১১ টি পদ শুন্য রয়েছে। এরমধ্যে ৯টি শিক্ষকের পদ। বাকী ২টি পদ অফিস সহকারীর। দীর্ঘদিন ধরে ৯টি শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার কারণে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান, ভূগোল, চারুকলা এবং জীববিজ্ঞান এই তিনটি বিষয়ের একজন শিক্ষকও না থাকার কারণে এ বিষয়গুলোতে পড়াশুনা করা শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ এবং হতাশা প্রকাশ করেছে। ইংরেজীর মতো গুরুত্বপূর্ন সাবজেক্টে ৪ জন শিক্ষকের পরিবর্তে মাত্র ২ জন শিক্ষক পাঠদান করছেন। এছাড়া বাংলা বিষয়ে ১ জন শিক্ষক, ভৌত বিজ্ঞানে (ক্যামিষ্টি এবং পদার্থ) বিষয়ে ১ জন, ব্যবসায়ী শিক্ষা বিষয়ে ১ জন এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিদ্যালায়টিতে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে ১ জন হিসাব রক্ষক, ১ জন করণিক কাম মুদ্রাক্ষরিক অফিস সহকারীর ২টি পদ রয়েছে। পদ দুটির বিপরীতে বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
শিক্ষক সংকটের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এস এম আব্দুল খালেকের সাথে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষক সংকট নিরসনকল্পে ইতিমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগকৃত শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হলে কেডিএ খানজাহানআলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোতে শূন্য পদগুলোর বিপরীতে আগামী ১ মাসের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গত মাসের ২২ তারিখে অফিস সহকারী পদের নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শূন্য পদের বিপরীতে অফিস সহকারীও শীঘ্রই নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরিন যে ড্রেনটি রয়েছে সেটি দিয়ে সঠিকভাবে পানি নিস্কাসন হয় না। ফলশ্রুতিতে সর্বদা ড্রেনের ভীতর পানি জমে থাকে। এরফলে ড্রেনের পানি পঁচে দুর্গন্ধ এবং মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ড্রেনটির পানি নিস্কাসনের জন্য বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহাবুর রহমান স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের সহযোগীতা চেয়েও পাননি বলে তিনি খুলনা গেজেটের কাছে অভিযোগ করেছেন।
খুলনা-যশোর রোড থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত মাত্র দেড়শ’ মিটার রাস্তা দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার না করার কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং কেডিএর আবাসন প্লটে বসবাসকারীদের যাতায়াতের প্রধান সড়ক। এছাড়া রাস্তাটি নীচু হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে ছাত্র ছাত্রীদের যাতায়াতে মারাত্মক বিঘ্নের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া একাডেমিক ভবনের পাশেই নির্মিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আবাসনের জন্য দ্বিতল ভবন। ভবনটি সরজমিনে যেয়ে দেখা যায় নির্মাণাধীন ভবনের বেডরুমগুলি খুবই সংকীর্ণ।
খুলনা গেজেট/ টি আই