নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় তিন বছরের কন্যা শিশু নুসরাত জাহান রোজার মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত সৎ মা জোবায়দা বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) নড়াইলের জেলা আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক হেলাল উদ্দিনের কাছে তিনি শিশু নুসরাতকে মুখ চেপে ধরে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী।
এর আগে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে তিন বছরের শিশু কন্যা নুসরাত জাহান রোজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহত নুসরাত নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের সজীব কাজীর কন্যা।
আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি মোতাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী জানান, “মঙ্গলবার সকালে নুসরাতকে তার বড় ভাই ইয়াসিন মারধর করলে সে কান্না করে। নুসরাতের কান্না থামাতে সৎ মা বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে যায়, তবুও শিশুটি কান্না করতে থাকলে এক পর্যায়ে তার সৎ মা জোবায়দা বেগম নুসরাতের মুখ চেপে ধরেন। এতে নুসরাত শ্বাসরোধে মৃত্যু বরণ করে।
সৎ মা জোবায়দা বেগম স্বীকারোক্তিতে আরও বলেন, নুসরাতের হত্যা কোন পরিকল্পিত ছিল না। প্রচুর কান্না করছিল এজন্য মুখ চেপে ধরে কান্না থামানোই ছিল তার মূল উদ্দেশ্যে। নুসরাতের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে সেটি বুঝতে পেরে জোবায়দা তাকে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে তার শশুর মোঃ খায়ের কাজীর বসত ঘরের বারান্দার খাটে শুয়ে রাখে।
দাদা মোঃ খায়ের কাজী বাইরে থেকে বাড়িতে এসে নুসরাতকে গোসল করানোর জন্য ডাকাডাকি করে। দাদী পান্না বেগম নুসরাতকে না পেয়ে সৎ মা জোবায়দা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে নুসরাত কোথায় তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। তখন জোবায়দা বেগম শাশুড়ীকে বলেন নুসরাত তার দাদার বারান্দায় ঘুমাচ্ছে। তখন দাদী পান্না বেগম বারান্দায় গিয়ে নুসরাতকে মৃত. অবস্থায় দেখতে পান।
এ সময় পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগড়া থানায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনার দিনেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নুসরাতের বাবা সজীব কাজী ও সৎ মা জোবায়দা বেগমকে আটক করে লোহাগড়া থানা পুলিশ। তবে নুসরাতের বাবা সজীব কাজীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত নুসরাত জাহান রোজার দাদা মোঃ খায়ের কাজী সৎ মা জোবায়দা বেগমকে একমাত্র আসামি করে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন রায় বলেন, স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তির পর দোষী জোবায়দা বেগমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ