সাতক্ষীরায় খামারে উৎপাদিত মুরগি ও ডিমের দাম বর্তমানে বেশি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন খামারীরা। ফলে গত কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে সাতক্ষীরার পোলট্রি শিল্প। জেলায় বাড়ছে নতুন নতুন পোলট্রি খামার। এসব খামারে উৎপাদিত মুরগি ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এসময় মরগি ও ডিমের ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সাতটি উপজেলায় উৎপাদনমুখী পোলট্রি খামার রয়েছে ৩ হাজার ৭৯৫টি। এর মধ্যে ব্রয়লার ১ হাজার ৪২৮, সোনালি ১ হাজার ৩৯৯ এবং লেয়ার ৯৬৮টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৭২৬টি। আর নিবন্ধন ছাড়া খামার পরিচালনা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৯টি। জেলার নিবন্ধিত খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চাঁদপুর এলাকার ডিম উৎপাদনকারী (লেয়ার) খামার মেসার্স লক্ষ্মী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী অরবিন্দ কুমার সরকার বলেন,গত ৮-১০ বছর ধরে ডিম উৎপাদনে লেয়ার মুরগি পালন করছেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে প্রায় ১২ হাজার মুরগি রয়েছে। এর মধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশ মুরগি ডিম দিচ্ছে। কয়েক বছর লোকসানের পর সম্প্রতি সময়ে খামারে লাভ দেখা যাচ্ছে।
এর কারণ হিসাবে তিনি আরও বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে মুরগি ও ডিমের দাম বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি ডিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত। মুরগি, খাদ্য, ওষুধ ও কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ বছরে ১০-১২ লাখ টাকা তার খরচ হচ্ছে। বর্তমান সময়ে এসব খরচ উঠে ভাল লাভ হচ্ছে। তবে বাজারে ডিম ও মুরগির এমন দাম থাকলে জেলার পোলট্রি শিল্প আরো সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই উপজেলার দহকুলা গ্রামের জিএম পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন বলেন, গত ১৫-১৬ বছর ধরে পোলট্রি খামার করেছি। বর্তমানে খামারে ছয় হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। ৪০-৪৫ দিন পর পর ছয়-সাত হাজার মুরগি বিক্রি করছি। বাজারে মুরগির যে দাম তা খামারিরা সঠিকভাবে পান না। অসম প্রতিযোগিতার কারণে ভালো লাভ করতে পারেন না এখানকার খামারিরা। বাজারে মুরগি বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজি দরে। সেখানে খামারিরা পান ১৫০-১৫৫ টাকা। জেলার বাইরের পাইকাররা এসব মুরগি কিনে নিয়ে যান। তারা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মুরগি ক্রয় করেন। অনেকটা খামারিদের জিম্মি করার মতো। বাইরের এসব ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে। ফলে মুরগির দাম বাড়লেও তার সুফল পাচ্ছেন না খামারিরা।
অন্যদিকে পোলট্রি খাদ্যের দামও বেড়েছে। জেলায় যেসব পোলট্রি খামার রয়েছে সেগুলো টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ ও খাদ্যের দাম নির্ধারণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যে খাদ্য দুই-তিন বছর আগে ৪২-৪৫ টাকা কেজি ছিল, তা এখন ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ী জহুরুল হক বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সব ধরনের মুরগির দাম বেশি। গত বছর এই সময়ে যে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৩০-১৩৫ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া ২১০ টাকার সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে তিন-চার হাজার কেজি মুরগি বিক্রি করছি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডাক্তার এসএম মাহবুবর রহমান বলেন, জলোয় তিন হাজারের অধিক পোলট্রি খামারে মুরগি ও ডিম উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব মুরগি ও ডিম সরবরাহ হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। উৎপাদন বাড়াতে জেলার খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মুরগির ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধও সরবরাহ করা হচ্ছে। এই জেলায় পোলট্রি খামারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত লক্ষাধিক মানুন। বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে তারা একে বেছে নিয়েছে। ভবিষ্যতে জেলায় পোলট্রি শিল্প আরো সম্প্রসারিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ এএজে