খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জুলাই গণহত্যা : ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ
  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

লিবিয়ায় জিম্মি সাতক্ষীরার ১৫ যুবক, চাওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ

গেজেট ডেস্ক

স্বপ্ন ছিল ইতালি যাওয়ার। কিন্তু বৈধ পথে কীভাবে যাবেন, জানা ছিল না। তাই ধরেছিলেন দালাল। সেই দালালদের মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশে রওনা করে লিবিয়ায় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ৪ মাস ধরে জিম্মি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১৫ যুবক। একই দালালদের মাধ্যমে গিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার পুলিশের হাতে আটক হয়ে সেখানকার কারাগারে আছেন উপজেলার আরও তিনজন।

ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা গনমাধ্যমে বলেন, ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দালালেরা মাথাপিছু ১১ থেকে ১৩ লাখ টাকা আদায় করেন। এর পর লিবিয়ায় নিয়ে তাঁদের জিম্মি করা হয়। জিম্মি অবস্থায় থাকা এসব যুবকদের মুঠোফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দিয়ে বাড়ি থেকে মুক্তিপণের অর্থ পাঠানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি থাকা যুবকদের মধ্যে শ্যামনগরের কৈখালী গ্রামের দেলোয়ার কয়াল, মামুন কয়াল, তারানীপুরের আবু রায়হান, বংশীপুরের মিলন, কৈখালীর আনারুল মিস্ত্রি, রহিম সরদার, মিঠু কয়াল, পূর্ব কৈখালীর জামির আলী, আবদুল কাদের, রাসেল হোসেন, রমি, হাসান, বায়েজিদের নাম জানা গেছে। আর কারাগারে আছেন শ্যামনগরের মানিকখালী গ্রামের নুর আমিনের ছেলে আসমত, জাকির আলীর ছেলে শাহাজান ও কৈখালী গ্রামের আবু জাফরের ছেলে সালামিন।

মামুন কয়ালের বাবা জাহার আলী কয়াল বলেন, প্রায় এক মাস আগে অন্যদের সঙ্গে থাকা তাঁর ছেলের একটি ভিডিও পাঠানো হয়। সে ভিডিওতে বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর জন্য কাকুতিমিনতি করতে দেখা যায় তাঁদের। ওই ভিডিওর ব্যাপারে এলাকায় জানাজানি হওয়ায় ওই যুবকদের দিয়ে নতুন একটি ভিডিও তৈরি করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে মামুনসহ অন্যদের বলতে দেখা যায়, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা কোনো নিউজ করবেন না, আমরা ভালো আছি।’ তবে মামুন ও তাঁর সঙ্গে থাকা আরেক যুবকের মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে গত সোমবার নতুন করে পাঠানো ভিডিওতে আবারও মামুনসহ অন্যদের টাকা চাইতে দেখা যায়।

অপর জিম্মি আবদুল কাদেরের ভাই আবদুর রাজ্জাক বলেন, জমি বিক্রি করে আট লাখ টাকায় ভাইকে ইতালি পাঠিয়েছিলেন। তবে পাচারকারীরা তাঁদেরকে লিবিয়ায় নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় রেখে দফায় দফায় আরও তিন-চার লাখ টাকা আদায় করে। ভাইকে উদ্ধারে তিনি বৈদেশিক ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পরিবারগুলোর অভিযোগ, শ্যামনগর উপজেলার শ্রীফলকাঠি গ্রামের হারুন-অর রশিদ, তাঁর ভগ্নিপতি মনিরুল ইসলাম ও ধুমঘাট গ্রামের সেকেন্দার আলী এই দালাল চক্রের সদস্য। স্থানীয়ভাবে সেকেন্দারসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়কে দায়িত্ব দিয়ে হারুন ঢাকায়, মনিরুল ও কুমিল্লার মুরাদ লিবিয়ায় অবস্থান করে সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। শুরুতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় সাগরপথে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই ১৮ জনকে লিবিয়ায় নিয়ে যান তাঁরা। পরে ভূমধ্যসাগরে পাড়ি দিতে ভালো নৌযানে তুলে দেওয়ার কথা বলে আরও দুই থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা।

কারাবন্দী সালামিন হোসেনের বাবা আবু জাফর বলেন, জমি বন্ধকের তিন লাখসহ দুজনের কাছ থেকে চড়া সুদে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে তিনি আট লাখ টাকা দিয়েছিলেন। অথচ ইতালি ঢুকতে পারা তো দূরের কথা, তাঁর ছেলে এক মাসের কাছাকাছি লিবিয়া কারাগারে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটাচ্ছেন। সন্তানের উদ্ধারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আবু জাফর।

অপর কারাবন্দী শাহাজানের বাবা নুর আমিন বলেন, শেষ সম্বল চাষের জমি বিক্রি করে হারুনের টোপে পড়ে ছেলেকে ইতালি পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে ছেলেকে ছাড়ানোতে হারুনের লোকজন দেড় লাখ টাকা দাবি করছেন। সকালে ও সন্ধ্যায় শুধু ছেলেকে খেতে দেওয়া হয়। গত কিছুদিন ধরে হারুন আর ফোন রিসিভ করছেন না।

এ ব্যাপারে কথা বলতে গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটায় মুঠোফোনে যোগাযোগ হয় দালাল হারুন-অর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, কিছু মানুষকে গত মাসে নৌকায় তুলে দিলেও সাগর উত্তাল থাকায় তাঁরা ফিরে আসেন। এর মধ্যে কারাগারে থাকা তাঁর এলাকার তিনজনকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাঁরা কাউকে জিম্মি করেননি দাবি করে হারুন বলেন, তাঁর ভগ্নিপতি মনিরুলের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েকজন লিবিয়া সন্ত্রাসীদের হাতে আটক হওয়ায় তারা মুক্তিপণ চাইছে। সেখানকার সহযোগীদের সহায়তায় জিম্মিদশা থেকে সেসব যুবকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাঁরা বিষয়টি জানার পর দালাল চক্রকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ দিতে বলা হলেও তারা দিচ্ছে না।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!