সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বোড়েছে সাতক্ষীরার উপকুলীয় উপজেলা আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বানভাসী মানুষের। খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার পর দীর্ঘ ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় এই দুই ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানির সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করছেন। ভিটে মাটি ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে বেড়িবাঁধের উপর, আশ্রয় কেন্দ্রে, নৌকায় ও পানির উপর টোঙ্গ ঘর বেধে কোন মতে জীবনযাপন করছেন বানভাসি এসব মানুষ। লোনা পানিতে ডুবে টিউবওয়েল ও খাবার পানির আধার গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। তার ওপর রয়েছে খাবার সংকট। দূর্গত এলাকায় ভেঙ্গে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। প্রায় চার মাসের অথিক সময় ধরে পানিতে ডুবে থাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া ও চুলকানিসহ পানিবাহিত নানা রোগ।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বড়েছে ইউনিয়নবাসীর। ইউনয়নের ১৭ টি গ্রামের মধ্যে ১৫ টি গ্রাম পারবিত। নদ-নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সদ্য নির্মাণ করা বিকল্প রিংবাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা। এখনো অনেক এলাকায় কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর সাথে তাল মিলিয়ে চলছে জোয়ার ভাটা। প্লাবিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। ভেঙ্গে পড়েছে স্যানিটেশস ব্যবস্থা। চলছে খাবার পানির তীব্র সংকট। ইউনিয়নবাসীদের সাথে নিয়ে নতুন করে ভেঙ্গে যওয়া রিং বাঁধগুলো মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দ্রুত টেকসই বড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে এঅবস্থার থেকে পরিত্রান পাওয়ার আর কোন উপায় নেই। তিনি ইউনিয়নের জনসধারণকে রক্ষা করতে দ্রুত টেকসই বড়িবাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল জানান, তার ইউনিয়নের ২২ টি গ্রামই এখন পানিতে নিমজ্জিত। তার উপর গত কয়েক দিনের বর্ষনে বানভাসী মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খাওয়ার কষ্ট তো রয়েছেই, তার উপর সুপেয় পানির কষ্ট, বাথরুমের কষ্ট, সব মিলিয়ে নিদারুন কষ্টের মধ্যে রয়েছে বানভাসীরা। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে তার নেতৃত্বে স্থাণীয় হাজার হাজার মানুষ হাজরাখালী থেকে কোলা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কি.মি. বিকল্প রিংবাধ দিয়ে কিছু কিছু এলাকায় পানি বন্ধ ঢোকা করেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে কলিমাখালী এলাকায় রিংবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে, উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় নতুন করে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে ৯ নম্বর সোরা গ্রামের দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৫০০ ফুট এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সেখানে স্থানীয় চেয়ারম্যান মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে শত শত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বিকল্প রিংবাধ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম জানান, প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭ টি গ্রামের মধ্যে ১৫ টি, শ্রীউলা ইউনিয়নের ২২ টি ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের প্রায় ১০ টি গ্রাম এখনও পানিতে নিমজ্জিত। তিনি আরো জানান, আগামী শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর মাস নাগাদ এসব এলাকায় টেকসই বেঁড়িবাধ নির্মানের কাজ শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডেও প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লবিত হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায়। ওই সময় বেশকিছু স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বড় একটি অংশের লোকালয়ে চলে জোয়ার-ভাটা। কিছু কিছু এলাকায় বিকল্প রিংবাঁধ দিয়ে পানি বন্ধ করা হলেও গত এক সপ্তাহ আগে প্রবল জোয়ারের চাপে তা আবারও ভেঙ্গে যায়।
খুলনা গেজেট/এনএম