দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় জামিনদারের শাস্তির কোন বিধান নেই। এই সুযোগে রায় ঘোষণার আগে শাস্তির ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে অনেক আসামি সটকে পড়ছে। ফলে একের পর এক অপরাধমূলক কাজ করতে আসামিরা কোন দ্বিধাবোধ করে না।
আদালত সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে জামিনদারের শাস্তির বিধান ছিল। আসামি পালিয়ে গেলে আদালত প্রথমে বন্ডে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করতেন। পরে তাকে আদালত অর্থ দন্ড দিত। কিন্তু বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় এটি পরিলক্ষিত হয় না। সাজা ঘোষণার পর আদালত শুধু আসামির প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এনামুল হক বলেন, রায় ঘোষণার দিন রায়ের যে আদেশ থাকবে তাই পালনীয়। আসামির পালানো বা থাকার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আসামি যদি পলাতক থাকে বা পালিয়ে গেল সেটি বড় কথা নয়। যেদিন আদালত রায় ঘোষণা করবেন জামিনপ্রাপ্ত আসামি যদি পলাতক থাকে অথবা মামলার শুরু থেকে পলাতক থাকে এবং তার যদি সাজা হয় তাহলে আদালত লিখবে আসামি যেদিন আত্মসমর্পণ করবে অথবা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হবে সেদিন থেকে সাজা কার্যকর করা হবে। রায় ঘোষণার সময় আসামি সাজার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে যদি পালিয়ে যায় সেক্ষেত্রে আদালত ওই জামিনদার ও আসামির আইনজীবীকে ডেকে সর্তক করতে পারেন। এক্ষেত্রে শাস্তির কোন বিধান নেই বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি কাজী সাব্বির আহমেদ বলেন, রায়ের দিন আসামি আদালতে উপস্থিত থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে। কিন্তু যদি সে পলাতক থাকে তাহলে তাকে দোষী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বিচারাধীন সময়ে আসামি যদি জামিন নিয়ে পালিয়ে যায় সেক্ষেত্রে জামিদারের শাস্তির কোন বিধান নেই। আর যদি শাস্তির বিধান চালু থাকে তাহলে কোন আসামির ব্যাপারে কেউই জামিনদার থাকবে না। এটা করতে গেলে মানুষ বিব্রত হবে। আদালত শুধু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবেন।
আইনজীবী কবিরুল ইসলাম সাগর বলেন, আদালত জামিন বন্ডে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি ও আইনজীবীকে ফাইন করতে পারেন, যদি আদালত আসামির প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না করে। এদিকে আইনের এই সুযোগ নিয়ে ইদানিং রায়ের আগেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে হত্যা, ধর্ষণ বা অন্য কোন গুরুতর অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত আসামিরা। রায়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা হলেও তারা আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকছেন। ফলে একধরণের হতাশা কাজ করছে ভিকটিম পরিবারে।
সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ খুলনায় মাহেন্দ্রা চালক রিপন হত্যার রায়ে ৪ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। রায় ঘোষণার সময় সকল আসামিই পলাতক ছিল। অথচ ৬ বছর আগে ঘটনার পর খুনিরা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও প্রদান করে। এরপরও আসামিরা কিভাবে জামিন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি গাজী আলাউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বিষয়টি নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই