খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ মাঘ, ১৪৩১ | ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

রাষ্টের আয়নায় দক্ষিণের সবচেয়ে দূষিত নদ খুলনার ময়ূর

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা মহানগরীর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত যৌবন হারানো নদের নাম ময়ূর। নগরীর ২২টি নর্দমা দিয়ে প্রতিদিন তরল ও কঠিন বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হচ্ছে এর গর্ভে। জলাবদ্ধ পানির অনবরত বাষ্পিভবন দ্রবীভূত পদার্থের ঘণীভবণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুস্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমেছে। অক্সিজেনের মাত্রাও কমেছে। এখানে জলজ প্রাণির বাঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। সে কারণে খুলনা বিভাগে এটি সবচেয়ে দূষিত নদ হিসেবে সনাক্ত করেছে সরকার।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় ‌প্রত্যেক বিভাগে একটি করে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য বিভাগীয় প্রশাসনকে উদ্দোগ নিতে বলে। প্রশাসন জরিপ করে ময়ূর নদকে দূষিত বলে প্রতিবেদন দিয়েছে। গত ৯ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনায় এক সভায় উল্লিখিত নদের পানি বিষাক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের সচিবলায়ে বাংলাদেশের নদ-নদী সমূহের তথ্য হাল নাগাদ করণ ও তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়। সভায় কেসিসি, কেডিএ, খুলনা বিশ্ববিদল্যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বেলা ও রুপান্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে দখল ও দূষণ মুক্ত করা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সভায় বলা হয়, বিভাগের ১৩৮টি নদীর মধ্যে ময়ূরের পানি সবচেয়ে বিষাক্ত ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গা ঘেঁষে নগরীর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে এটি প্রবাহিত। আড়ংঘাটা থেকে আলুতলা পর্যন্ত এর পরিধি ১২ কি:মি:। স্বাধীনতা পূর্বকালে ভূ-পৃষ্টের জলাধার হিসেবে নগরীর আর্শীবাদ বলা হত। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এখানে মিঠে পানির প্রবাহ ছিল। দু’পাশে বসতি বাড়তে থাকায় বর্জ্য প্রতিনিয়ত নদের গর্ভে পড়ায় পানি দূষিত হতে থাকে ।

বর্ষায় দু’ই পাড়ের মানুষ নদের ভেতর বাঁশের মাচার পায়খানা তৈরি করেন। শৈবাল বাসা বেঁধেছে, নগরীর যাবতীয় তরল ও কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশনও হয়। প্রতিদিন টনকে টন ময়লা-আর্বজনা ফেলায় পানি সম্পূর্ণ দূষিত ও ভরাট, পরিবেশ দুর্গন্ধময় আর্বজনাবৃত, বদ্ধ জলাশয়ের সৃষ্টি হয়।

মূল নদ ভৈরবের শাখা এই নদটির দৈর্ঘ্যে ১৫-২০ কিলোমিটার, প্রস্থে ৬০-১২০ ফুট। একসময় ময়ূরের গভীরতা ছিল ৫ থেকে ৭ মিটার, আবহমানকাল ধরে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। নগরীর অসংখ্য খালের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি স্রোতস্বিনী এই নদে পড়ত। নিয়মিত জোয়ার-ভাটায় পানি আসা-যাওয়ার মধ্যে নগরীর জলাবদ্ধতা ও দূষণমাত্রা শূন্যের কোটায় থাকত।

প্রবীণরা বলছেন, নিম্নভূমি উদ্ধারের নামে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলায় ময়ূর নদের নগরীর প্রবেশমুখে ১০ গেটের স্লুচ গেট নির্মাণ করে। এর ফলে স্রোতস্বিনী নদীটি জলাশয়ে পরিণত হয়, হারিয়ে যায় স্রোতস্বিনী রূপ, রুদ্ধ হয় গতিপথ। দু’তীর বসতি স্থাপনকারী লক্ষাধিক মানুষের পয়ঃনিষ্কাশনের সহজ স্থানে পরিণত হয় সুন্দর নদটি। গড় ওঠে অসংখ্য উন্মুক্ত পায়খানা। টন টন বর্জ্যের ভারে নুয়ে পড়ে ময়ূর।

পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনার সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেছেন, শুস্ক মৌসুমে পানির গুণগত মান খারাপ হয়েছে। বসতিরা তরল ও কঠিন বর্জ্য নিক্ষেপ করে। অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে। জলজ প্রাণির বাঁচা কষ্টসাধ্য হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন খননের উদ্যোগ নেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে।

খুবির পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সাবেক প্রধান প্রফেসর ড. দিলীপ কুমার দত্ত এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ২০০২ সালে এর পানিতে সামগ্রিক দ্রবীভূত পর্দাথের পরিমাণ প্রতি লিটারে ২৫০-৩৫০ মি: গ্রাম রেকর্ড করা হয়। ২০১০ সালে এই নাটকীয় পরিবর্তন হয়। এ সালে প্রতি লিটারে দ্রবীভূত পদার্থের পরিমাণ ৯ হাজার লিটারের বেশি । এর জন্য মূলত দায়ী তরল ও কঠিন বর্জ্য এবং পানির প্রবাহ বিঘ্নতা। এ অঞ্চলের সামগ্রিক ঢাল দক্ষিণমুখী হলেও খুলনা নগরীর ঢাল পশ্চিমমুখী। ফলত: প্রাকৃতিক জল নিস্কাশন অবশেষে ময়ূর মুখী হয়। নগরীর তলল ও কঠিন বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হওয়ায় এটি ভাগাড়ে পরিণত হয়। ইতিমধ্যে ময়ূর তার উৎস সংযোগ হারিয়েছে। র্দীঘ দিন জলকপাট অকার্যকর থাকায় নদটি একটি পরিত্যক্ত প্রবাহে পরিণত হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!