বিদেশে পাচারের শিকার জাফর হোসেন রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর সাথে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। এ কাজে তাকে বাধ্য করা হয়েছে। এ ঘটনা শুনে তার পরিবারের সদস্যরা হত বিহবল হয়ে পড়েছে। যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ার সরদারপাড়ার খায়রুল সরদারের ছেলে জাফর হোসেন।
সম্প্রতি তিনি মোবাইল ফোনে পরিবারকে পাচার ও তার বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়েছেন। এ খবরে আতংক ও দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন জাফরের পিতাসহ মা হাসিনা খাতুন ও স্ত্রী খাদিজা খাতুন। তার শিশু দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মুঠোফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপে নিজের যুদ্ধপোশাক পরে তোলা ছবি পাঠিয়েছেন জাফর।
জাফরের পিতা খায়রুল সরদার বলেন, গত পাঁচ মাস আগে ঢাকার একটি এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাসে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন জাফর। এ জন্য তাকে দিতে হয় ৯ লাখ টাকা। কিন্তু দালালের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রথমে তাকে সৌদি আরবে থাকতে হয় দুই মাস। এরপর দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে তাদের বিক্রি করে দিয়েছে দালাল চক্র। দুবাই থেকে নতুন দালালরা তাদের নিয়ে যায় রাশিয়ায়। রাশিয়ায় যাওয়ার পর বলা হয় আর্মিদের কাপড় পরিস্কার করতে হবে। কিন্তু তাদের নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, এখন তার ছেলে যুদ্ধের ময়দানে কান্নাকাটি করছে। সে জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশি একজন মারা গেছে ও একজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আমার ছেলে এখন বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে। না হলে তার মৃত্যু হবে বলে জানিয়েছে। হতভাগ্য পিতা খায়রুল সরদার তার ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
পাচারের শিকার জাফরের পিতা-মাতা জানান, মামাতো ভাই মাহাবুবুর রহমানের মাধ্যমে ঢাকার এজেন্সির সাথে যোগাযোগ হয় তাদের। তবে মাহবুবুর রহমান অস্বীকার করেন জাফরের বিদেশ যেতে তার মাধ্যমে এজেন্সির সাথে যোগাযোগের কথা। তিনি বলেন, ঢাকার হাজি ক্যাম্প এলাকার তামান্না নামে এক মহিলার সাথে যোগাযোগ করে বনানী ৪ নম্বর রোডের হাসান এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে গেছে জাফর।
তিনি আর বলেন, এজেন্সিতে জাফরের পাসপোর্ট প্রথমে জমা দেওয়া হয় সাইপ্রাসে যাওয়ার জন্য। সাইপ্রাসে না হওয়ার কারণে দুই বছর পর বলে রাশিয়ায় লোক যাচ্ছে রাশিয়ায় পাঠাবে। আমরা বলি রাশিয়া যুদ্ধের দেশ ওই জায়গা তো নিরাপদ না। তারা (এজেন্সি) বলে, নিরাপদ আছে ওই জায়গায় ক্লিনারের কাছ করবে। যুদ্ধের কাহিনী ওরা দেখতে পারবে না এবং জানবেও না। এইভাবে নিয়ে যাওয়ার পরে এখন বিপদে পড়েছে। তারা এখন অস্ত্র হাতে ট্রেনিং দিয়েছে। এখন সে (জাফর) মাটির নিচে বাংকারে আছে। এখন সে মৃত, না বেচে আছে। আমরা কোন খোঁজ-খবর পাচ্ছি না পাঁচ দিন।
মাহবুব জানিয়েছেন, জাফরের দেশের ফিরিয়ে আনতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।
এদিকে, স্বামীর চিন্তায় শুধুই কাঁদছেন জাফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন। তিনি বলেন, আমার স্বামী অনেক কষ্টে আছে। আমার স্বামীকে আমি ফিরে পেতে চাই । ৪/৫ দিন আগে আমার সাথে কথা হয়েছে। সে বলেছে, আমার সন্তান দুটিকে তুমি দেখে রেখো। আমি বেচে থাকতে পারবো কিনা জানি না। তিনি বলেন, সরকারের কাছে একটাই দাবি আমার স্বামীকে আমি ফিরে পেতে চাই।
খুলনা গেজেট/ টিএ