খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ মাঘ, ১৪৩১ | ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ইতালির রোম থেকে ছেড়ে আসা বিমানের একটি ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক, নিরাপদে অবতরণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে
  জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস আলম
  উত্তরা পূর্ব থানার হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ডে
৪ মাসে ১০ খুন, আহত অসংখ্য মানুষ

রাত হলেই আতংকের শহর খুলনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না। প্রায় প্রতিরাতেই নগরীর কোথাও না কোথাও সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। গত ৪ মাসে খুলনায় ১০টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

এদিকে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মহানগর বিএনপি। প্রতিবাদে আজ বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে দলটি।

খুলনা থানার এস আই রাকিবুল ইসলাম বলেন, সোমবার বেলা ১১ টার দিকে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন পানির ট্যাংকের সামনে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সিরিয়াল চলছিল। এ সময়ে যুবদল নেতা মানিক সেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে ছিলেন। পুরাতন রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা শাহাজাহান হাওলাদারের ছেলে মেহেদী হাওলাদারের সাথে সিরিয়াল দেওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো চাকু দিয়ে মানিকের পেটের বাম পাশে ও বুকের ডান পাশে আঘাত করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণকালে তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, মানিককে চাকু দিয়ে আঘাত করার ঘটনায় স্থানীয়রা মেহেদীর বড়ভাই সাজ্জাত হাওলাদারকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। বর্তমানে সাজ্জাদ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় মেহেদীর বোন তুলিকেও হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। হেফাজতে নেওয়া সাজ্জাদ ও তুলিকে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ মুনীর উল গিয়াস বলেন, যুবদল নেতা মানিক হত্যাকান্ডের মূল আসামি মেহেদী ঘটনা ঘটিয়ে সটকে পড়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।

সন্ধ্যা হলেই শান্ত খুলনা অশান্ত

গত সাড়ে তিন মাসে খুলনায় ১০টি খুনের ঘটনাসহ শতাধিক অপরাধ সংগঠিত হয়। সন্ধ্যা হলেই শান্ত খুলনা হয়ে ওঠে আতংকের নগরী। সন্ত্রাসী কার্যকালাপে উদ্বিগ্ন নগরবাসী। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর কমার্স কলেজে মধ্যে রোডে নওফেল নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সজীব শিকদার (২৯) নামের এক যুবক গুরুতর আহত করা হয়।

এদিকে শনিবার রাতে নগরীর মিস্ত্রিপাড়া রসুলবাগ মসজিদের সামনে ২৭ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলে যুগ্ম আহবায়ক শাহীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরপর কয়েকটি গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। একটি গুলি কানে বিদ্ধ হয়ে বের হয়ে গেলেও ডান বুকে বিদ্ধ হওয়া গুলিটি বের করতে পারেনি চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খুলনার চরমপন্থীদের পরিকল্পনায় কক্সবাজারে পরিকল্পিতভাবে খুন হন কেসিসি’র ৪ নং ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর গোলাম রব্বানি টিপু। এ ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছে।

এর আগে মাদকের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে খুন হন রাসেল ওরফে পঙ্গু রাসেল। ৩ নভেম্বর রাত ৩ টার দিকে বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। একই রাতে বাড়িতে যাওয়ার পথে কমার্স কলেজের সামনে সন্ত্রাসীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয় জেলা যুবদলে যুগ্ম সম্পাদক মো: হাবিবুর রহমান বেলাল। ৩০ নভেম্বর রাতে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করেন ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিন হোসেন বোয়িং মোল্লাকে। চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এনিয়ে হতাশ পরিবারের সদস্যরা।

এছাড়া ৩ ডিসেম্বর মাদক বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় নাজিরঘাট এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীরা মাছ ব্যবসায়ী ইউনুসকে গুলি করে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। ১২ ডিসেম্বর রাতে লবণচরা থানা এলাকার একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে সন্ত্রাসীরাা কুপিয়ে জখম করে রেজা শেখ নামে এক যুবককে। তাদের অস্ত্রের আঘাতে শরীর থেকে তার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে ওই যুবক চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

১৩ ডিসেম্বর রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলামের ছেলে আকাশ। তাকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা পরপর কয়েটি গুলি ছোড়ে। একটি গুলি তার কোমরে বিদ্ধ হয়। বর্তমানে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়াও নগরীতে প্রতি রাতে চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধ ঘটেই চলেছে।

নগরীর আযমখান কমার্স কলেজের ভেতরে সুন্দরবন কলেজ শিক্ষার্থী নওফেলের ওপর আক্রমনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত খুলনা থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে মামলা নেওয়া হবে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ মুনীর উল গিয়াস এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

হরিণটানা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ খায়রুল বাসার খুলনা গেজেটকে বলেন, সজীব শিকদার আহত হওয়ার ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা সজীবকে নিয়ে ঢাকায় গেছেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধির পেছনে লোভ লালসার একটি প্রভাব রয়েছে। সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি, মাদকের প্রভাব ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সন্ত্রাসী কার্যকালাপ দুর করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের মোবাইল ডিউটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী পুলিশি ভূমিকায় ছাত্র-জনতার ক্ষুব্ধতার কারণে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ। এজন্য হয়তো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

 

খুলনা গেজেট/সাগর/হিমালয়

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!