প্রথম পর্যায়ে খুলনার চালনাসহ ২৪ পৌরসভায় ভোট গ্রহণের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ২২ নভেম্বর। তাতে ভোট গ্রহণের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যদিয়ে তৃণমূলে শুরু হল নির্বাচনী লড়াই। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি।
খুলনার চালনা পৌরসভায় এবারের নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এলাকাটি আওয়ামী লীগের সমর্থক অধ্যুষিত হিসেবেও পরিচিত। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে দলের ভেতর বিভক্তি আছে। বিএনপি সে সুযোগ কিছুটা কাজে লাগাতে পারলে কাগজে-কলমে এবারের নির্বাচনে ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে।
নির্বাচন ঘিরে এমন কথাবার্তা চলছে ভোটারদের মধ্যে। রোবাবার (২৭ ডিসেম্বর) চালনা পৌর নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২৫ জনের সঙ্গে খুলনা গেজেটের কথা হয়। তাঁদের ভাষ্যমতে, ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো এই পৌরসভায় নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল হারান সনত কুমার বিশ্বাসকে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ফল হয় ঠিক উল্টো। এবারের নির্বাচনে সনত কুমার বিশ্বাস দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্যদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খাঁন চালনা পৌরসভার প্রথম পৌর প্রশাসক ছিলেন। মেয়র পদের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী গৌতম কুমার রায়।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত আওয়ামী লীগ (নৌকা) প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল এবং বিএনপির (ধানের শীষ) প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খাঁনের মধ্যে। সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলো কে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পৌরসভা পরিচালনার দায়িত্বে আসছে, মেয়রের চেয়ারে বসবেন।
এবারও কি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতছে নাকি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতবে, এমন নানামুখী আলোচনার উত্তর পাওয়া যাবে সোমবার রাতের মধ্যেই। বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর শুরু হবে ভোট গণনা। নির্বাচনে এবারই প্রথমবারের মতো এই পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
চালনা পৌরসভা নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিন্টু বিশ্বাস। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘একাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। উৎসবমুখর ভোট হবে, এটাই আশা।’ তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহবান জানান। নির্বাচনী সব সরঞ্জাম ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ২০২ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছেন। এর মধ্যে পুলিশ, আনসার ও বিজিবি সদস্যরা থাকবেন। মোট নয়টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে।ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যে প্রত্যেক কেন্দ্রে নয়জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং বিজিবি (প্রতি প্লাটুনে ২০জন) দুই প্লাটুন ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।
তিনি আরও জানান, চালনা পৌরসভা নির্বাচনে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালনসহ সার্বিক বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও একজন সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে একজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নয়জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৪৩ জন এবং পোলিং কর্মকর্তা ৮৬ জন।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) যেসব পৌরসভায় ভোট হবে তা হলো-খুলনার চালনা, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোণার মদন, মানিকগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, সুনাগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড।
খুলনা গেজেট / এআর