খুলনার লবনচরার দক্ষিণ মোল্লাপাড়া এলাকায় মহানগর ডিবি পুলিশের মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানকালে মাদক কারবারীদের হামলায় এক সোর্স নিহত এবং এক এএসআই ও অন্য দুই সোর্স আহত হওয়ার ঘটনায় লবনচরা থানায় ২টি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় মহানগর ডিবির একটি টিম ও তিন জন সোর্সসহ লবনচরা থানাধীন বান্দাবাজার এলাকায় একটি ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রকে আটক করতে অভিযান চালায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে মাদক কিনতে যায় পুলিশের সোর্স। এ সময় ডিবির এএসআই এমরান আলী এক মাদক বিক্রেতাকে জাপটে ধরেন। তখন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আকস্মিক ৮/১০ জন মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীরা ওই পুলিশ সদস্য ও তাদের সোর্স এর উপর হামলা চালায়। এ সময় এলোপাতাড়ি চাইনিজ কুড়াল, ছুরি ও রড দিয়ে তাদের আঘাত করে। অতর্কিত আক্রমণে অভিযান টিমের সাথে থাকা ২ জন সোর্স ও এক পুলিশ সদস্য গুরুতর জখম হলে তাদেরকে চিকিংসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখানে মোঃ শফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক সোর্সকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের এএসআই এমরান আলী (৩৩) ও সোর্স মো. মনির আহমেদ (২৮) আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এমরানের মাথা, হাত ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া সোর্স মনিরের হাতে, পিঠে ও পেটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।তাদের উভয়ের শরীরে বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া লেগেছে। তাছাড়া রনি শেখ (৩৫) নামের আরেক সোর্সকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
নিহত শফিকুল ইসলাম ফুলতলা উপজেলার উত্তর আলকা গ্রামের মৃত গফুর বিশ্বাস ছেলে। আহত সোর্স মনির হোসেন ফুলতলা সদরের মৃত ইসমাঈল হোসেন মকবুলের পুত্র ও রনি শেখ (৩৫) খানজাহান আলী থানার আটরা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত গণি শেখের পুত্র।
ঘটনাস্থল থেকে ১টি রক্তমাখা চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারের জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ। এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বাদী হয়ে লবণচরা থানায় হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের পৃথক মামলা করেছে।
এ বিষয়ে খুমেকে চিকিৎসাধীন আহত ডিবির এএসআই এমরান আলী খুলনা গেজেটকে বলেন, ঘটনাস্থলে যেয়ে এক মাদক বিক্রেতাকে ধরার সাথেই আকস্মিক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ৮/১০ জন আমাদের উপর হামলা চালায়। দুলাল নামের এক মাদক বিক্রেতাকে জাপটে ধরেছিলেন বলে তিনি জানান।
খুমেকে চিকিৎসাধীন সোর্স মনির হোসেন বলেন, আমাদের উপর আকস্মিক হামলা চালানো হয়। কথা বলতে কষ্ট হওয়ায় তিনি আর কিছু বলেননি। তবে তার স্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভালো কাজ করতে যেয়ে আজ তার (স্বামীর) এ অবস্থা হয়েছে। আর এখানে একটা বেডও পেলাম না। বারান্দায়ও জায়গা হলো না। সিঁড়ির পাশে পথচারীদের ধুলায় এখানে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লবনচরা এলাকার কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঐ এলাকায় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চলে আসছে। তাছাড়া দুলাল (২৩) ও হেলাল (২২) নামে দু’জনের নাম পাওয়া যায়, যারা এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সমীর কুমার সরদার খুলনা গেজেটকে বলেন, ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই