যশোরের অভয়নগর উপজেলায় পান চাষে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু করোনারা ধাক্কা ও বিদেশে পান রপ্তানী বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের পান চাষীরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে রয়েছে।
জানা গেছে, করোনার ধাক্কা সামলে দ্বিগুন উদ্যমে চাষে মনোযোগী হলেও বিদেশে পান রপ্তানী শুরু না হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হিমসিম খাচ্ছে পান চাষীরা। পাশাপাশি কৃষি অফিসের তদারকির অভাব ও সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষীরা রয়েছে বিপাকে।
চলতি অর্থ বছরে এ উপজেলায় ১ হাজার ৭শ’ ৬৮ মেট্টিক টন পান উৎপাদন হয়েছে। পানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলায় নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের সোনাতলা বাজারে নতুন পান বাজার চালু হয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ছোট বড় ৬ টি পান বাজার রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে এ উপজেলায় মোট ৫শ’ ৫ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৬শ’ ৮৩ টি পান বরজে পান চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৩ দশমিক ৫ মেট্টিক টন। সর্বমোট ১ হাজার ৭শ’ ৬৮ মেট্টিক টন পান উৎপাদন হয়েছে। এ অঞ্চলে মোট পান চাষীর সংখ্যা ২ হাজার ৫০ জন।
সূত্র আরও জানায়, উপজেলার সোনাতলা, বাবুর হাট (শুভরাড়া), বাঘুটিয়া, রাঙ্গার হাট, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট ও রাজঘাটে পানের বাজারে পাইকারি পান বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও অভয়নগরের অনেক পান চাষী পার্শ্ববর্তী যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ও খুলনার ফুলতলায় পাইকারি পান বাজারে পান বিক্রি করেন থাকেন। পান চাষীদের দাবি, করোনার আবির্ভাবের পূর্বে এ অঞ্চল হতে বিশ্বের বেশকিছু দেশে পান রপ্তানী শুরু হলে আশার আলো দেখেছিলো তারা। কিন্তু করোনার আবির্ভাবের পর বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় চাষীরা। বর্তমানে পানের কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন তারা।
উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের পান চাষী শিতল কুমার, দিপংকর মন্ডল, প্রকাশ দে, মৃনাল হালদার, জিহাদ হোসেন, দেয়াপাড়া এলাকার রবিউল শেখ, বিভাগদি গ্রামের দিপংকর গাইন, বাঘুটিয়ার শরিফুল ইসলাম ও অভয়নগর গ্রামের মনোরঞ্জন দত্ত ও হারাধান দত্ত বলেন, করোনার আগে বিদেশে পান রপ্তানী শুরু হলে তারা বেশ ভালো দাম পেতেন। তারা নতুন আশা দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু করোনার ধাক্কায় বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও বেঁচা কেনা কমে যাওয়ায় তাদেরকে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্তমানে অভ্যন্তরীন বাজার চাঙ্গা হলেও পানের কাঙ্খিত দাম তারা পাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, কৃষি অফিসও তাদের তেমন কোন সহযোগিতা করে না। পানের নানা রোগ বালাই হলের মাঠ পর্যায়ে তারা কোন কৃষি কর্মকর্তার উপদেশ বা পরামর্শ পান না।
তারা আক্ষেপ করে বলেন, পান চাষের ক্ষেত্রে অদ্যবধি সরকারি কোন সহযোগীতাও তাদের মেলেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, পান চাষের জন্য সরকারি কোন প্রকল্প না থাকায় চাষীদের পৃষ্টপোষকতা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তথাপি জাইকা থেকে একটি প্রজেক্টের সহায়তায় আমরা ইতিমধ্যে ৫০ জন পান চাষীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
তাছাড়া ব্লক সুপারভাইজাররা মাঠ পর্যায়ে তাদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি এ উপজেলায় পান চাষের বিপুল সম্ভবনার কথা স্বীকার করে বলেন, পান চাষীদের পৃষ্টপোষকতাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, পান চাষে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এ উপজেলায়। চাষীরা যেন এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়। সেজন্য তাদের পাশে থাকতে হবে।