খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে তিন ধাপ পিছিয়ে ৮৪তম বাংলাদেশ
  দীপ্ত টিভির তামিম হত্যা: ৫ আসামি ৪ দিনের রিমান্ডে

যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় গৃহবধূ আয়েশাকে, আটক ১

নিজস্ব প্রতিবেদক

যৌতুকের শিকার হলেন নতুন বাজার চর এলাকার গৃহবধূ আয়েশা খানম (৩০)। রোববার রাতে তাকে হত্যা করে স্বামী রাজীব গাজী পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তিন বছর বয়সী সন্তান আব্দুল্লাহকে খুঁজে পায়নি আয়েশার আত্মীয় স্বজনরা। সোমবার রাতে নিহতের ভাই রেজওয়ান কাজী ৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় রাজিবের বোন রুমাকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহতের ভাই রেজওয়ান কাজী খুলনা গেজেটকে বলেন, ২০১০ সালে পারিবারিকভাবে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার চান গাজীর ছেলে রাজীব গাজীর ছেলের সাথে একই থানার উনশিয়া গ্রামের আব্দুর রউফ কাজীর মেয়ে আয়েশা খানমের বিয়ে হয়। রাজীব গাজী বিয়ের আগ থেকে মাদকাশক্ত ছিল, এটা নিহতের পরিবার জানতেন না।

বিয়ের দু’বছরের মাথায় তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তান হয়। কন্যা সন্তানের পর রাজীব ভাল হয়ে যাবে এই ভেবে মেয়ের পরিবার তাকে আর সেখান থেকে নিয়ে আসেনি। এরপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। এটা সহ‌্য করতে না পেরে আয়েশা কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসে তাকে বুঝিয়ে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

আব্দুল্লাহ নামে একটি সন্তান হয় তাদের। এর আগে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বাবা রউব কাজী ২ লাখ টাকা দেয় জামাই রাজীবকে। তারপরও মানসিক নির্যাতন বন্ধ হয়না। আবারও ১ লাখ টাকা দাবি করে টমটম গাড়ি কেনার জন্য। নির্যাতন সহ‌্য করতে না পেরে খুলনা নতুন বাজারে বড়বোন রাবেয়ার কাছে চলে আসে আয়েশা খানম। এখানে ছবি ফিস নামে একটি মাছ কোম্পানীতে কাজ করতে থাকেন আয়েশা। বড় মেয়ে জামিলাকে লবনচরা এলাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। ছেলে আব্দুল্লাহকে কাছে রেখে দেয় আয়েশা।

এ মাসের প্রথম দিকে তরিকুলের গলিতে কালামের ভাড়াবাড়িতে ওঠেন আয়েশা। খবর জানতে পেরে রাজীব ওই বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে এসে রাজীব বলে তাকে আর কোন মারধর করা হবেনা। কোন যৌতুকের টাকা চাওয়া হবেনা। এখানে থেকে রাজীব কাজ করে সুখে শান্তিতে সংসার করবে। কিন্তু রাজীব যে রাগ পুষে রেখেছে সেটি রেজওয়ান ও তার বোন রাবেয়া টের পায়নি। রোববার রাতে বৃষ্টি হয়। ওই সময়ে পাশের ঘরে কেউ ছিল না। রাতে হত্যা করে তার ছোট ভাগ্নে আব্দুল্লাহ‌কে সাথে নিয়ে পালিয়ে যায় রাজিব।

সোমবার সকালে গ্রাম থেকে কিছু খাবার আয়েশার জন্য পাঠানো হয়। রাবেয়ার ছেলে ইয়াছিন আরাফাত ওই খাবার নিয়ে খালা আয়েশাকে দিতে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে ফিরে যায়। পরপর তিনবার এসে দরজা বন্ধ দেখে জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখে আয়েশা কাথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। তার মুখ দিয়ে অনাবরত ফেনা বের হচ্ছে। এটা দেখে ইয়াছিন চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ওই অবস্থা দেখে থানায় খবর দেয়। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন বলেন, আয়েশাকে যৌতুকের জন্য শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার নিহতের ভাই একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং ২৬। এ মামলায় রাজীবের বোন রুমাকে সোমবার রাতে মৌলভীপাড়া টুকু কেরানির বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। তবে মূল আসামি রাজিব গা ঢাকা দিয়েছে। তাকে আটক করতে পারলে সব রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!