মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরা জেলা জামাতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল ও সাতক্ষীরার নবজীবন এনজিওর সাবেক নির্বাহী পরিচালক খান রোকনুজ্জামান সহ দু’জনের বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
জানা যায়, মঙ্গলবার (২২ মার্চ) মামলাটি কার্যতালিকায় এলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য ২৪ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করে দেয় বলে প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আব্দুল খালেক মন্ডলসহ দু’জনের মামলার শুনানি শেষে রায় ঘোষণার তারিখের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও সাক্ষ্য গ্রহণ-যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হলো।
বিগত ২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় নাশকতার উদ্দেশ্যে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় ট্রাইব্যুনাল। এর আগে শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম গাজী। এ মামলার চার আসামিদের বিরুদ্ধ ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত কার্যক্রম চলে ২০১৭ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেক মন্ডল, রোকনুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল বাকী এবং জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। এদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল বাকী এবং জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কা খান নামের দুই আসামি মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান। বাকি দুই আসামির মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাতক্ষীরা সদর আসনের সাবেক এমপি আব্দুল খালেক মন্ডলকে তদন্তের সময়ই গ্রেপ্তার করা হয়। আর সাতক্ষীরার নবজীবন এনজিওর সাবেক নির্বাহী পরিচালক একাত্তরের কসাই হিসেবে পরিচিত খান রোকনুজ্জামান এখনও পলাতক।
তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। যার মধ্যে ৬ জনকে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ। সেখানে মোট ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য শুনেছে ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমনই রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন। খালেক মন্ডলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। আর পলাতক আসামি খান রোকনুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।