খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  সাতক্ষীরার তালায় ধানের ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত, আহত আরও ১১ জন
  চট্টগ্রামে লরির ধাক্কায় তরুণ নিহত, চার ঘণ্টা পর পানির নিচে শিশুর সন্ধান

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মারমুখী পুলিশ, গ্রেপ্তার আরও ৪০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দমনে পুলিশ আরও বেশি মারমুখী। গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আরও প্রায় ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ সহিংস আচরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে পুলিশের ‘দুর্ঘটনাবশত’ গুলি ছোড়ার ঘটনাও। তবে ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল ইসরায়েল ও তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ও গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে প্রথম বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গত শতকের ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি। পুলিশ ১৮ এপ্রিল থেকে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

বার্তা সংস্থা এপির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে অন্তত ৫০ বার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসব ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত ও ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বেশ কিছু দেশে গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

ইউসিএলএ বেপরোয়া পুলিশ

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউসিএলএ) অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে বললেও তাঁরা অস্বীকৃতি জানান। এ সময় অন্তত ২১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ভেঙে দেয়। ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযানের সময় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী প্রাণঘাতী নয়, এমন গ্রেনেড ব্যবহার করে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের প্রতিরোধের ব্যর্থ চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা।

এ সময় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ইউসিএলএর এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষার্থী। অনুগ্রহ করে আমাদের ব্যর্থ করে দেবেন না। আমাদের ব্যর্থ করে দেবেন না।’

ওই শিক্ষার্থী যখন কথা বলছিলেন, তখন তাঁকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল। তাঁকে পুলিশের দুই সদস্য ধরে রেখেছিলেন। একপর্যায়ে ছাড়া পেয়ে রায়ান নামের ওই শিক্ষার্থী আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, এই লড়াই থেকে কেউ তাঁকে থামাতে পারবে না।

ইউসিএলএ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ক্যাম্পাসে জরুরি পরিস্থিতির কারণে বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হয়েছে।

ধরপাকড় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও

বৃহস্পতিবার নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ডার্টমাউথ কলেজ থেকে ৯০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওরেগনে পোর্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে ঢুকে বিক্ষোভরত বহু শিক্ষার্থীকে অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানা যায়নি।

মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড়ের সময় এক শিক্ষক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষক স্টিভ তামারি সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তিনি।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রেপ্তারের সময় অধ্যাপক স্টিভ তামারি মাটিতে পড়ে গেলে পুলিশের এক সদস্য তাঁকে হাঁটু দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। পরে দুই হাত পিছমোড়া করে তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়।

এ ঘটনায় শিক্ষাবিষয়ক প্রকাশনা দ্য মিডল ইস্ট রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন প্রজেক্ট (এমইআরআইপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘স্টিভের সঙ্গে যা করা হয়েছে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ের সহিংস আচরণ। আমরা পুলিশের নিষ্ঠুরতা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের আচরণের নিন্দা জানাই।’

ইসরায়েল এই ছাত্র বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে ইসরায়েলের সমালোচকেরা বলছেন, বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করতেই দেশটির এমন অভিযোগ।

অবশেষে মুখ খুললেন বাইডেন

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের আইনের শাসন বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে অবশ্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!