যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন বন্দি কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু আজো এই চাঞ্চল্যকর হত্যার বিচার শেষ হয়নি। জড়িত চার কর্মকর্তাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট কেন্দ্রের ভেতরে কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে তিন শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ট্রিপল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোরের চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রকিবুজ্জামান বলেন, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রের চার কর্মকর্তাসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক অপর চার শিশুর বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া একজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।
চার্জশিটে অভিযুক্ত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের চার কর্মকর্তা হলেন, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকোসোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান। অভিযুক্ত কেন্দ্রের চার বন্দি কিশোর হলো, গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটোরের হুমাউন হোসেন, মোহাম্মদ আলী ও পাবনার ইমরান হোসেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক বন্দি অভিযুক্তরা হলো, চুয়াডাঙ্গার আনিস, কুড়িগ্রামের রিফাত হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ও পাবনার মনোয়ার হোসেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান আরো বলেন, মামলায় মোট ১৩ জন আসামি ছিলেন। তদন্তশেষে এ ঘটনায় ১২ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এরমধ্যে চার কর্মকর্তা ও চার বন্দি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া অপর চার বন্দি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেয়া হয়েছে। তদন্তে বন্দি কিশোর হত্যার সাথে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাময়িক বরখাস্ত কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুকের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি। এ কারণে তাকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন কেন্দ্রের প্রধান প্রহরি নূর ইসলামকে মারপিটের জের ধরে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর ‘বন্দিদের’ অমানুষিকভাবে মারপিট করা হলে তিন কিশোর নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ১৪ আগস্ট রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আসামি করা হয়। এ মামলায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পুলিশ আটক করে। আটকের পর পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। রিমান্ড শেষে বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আদালতের নির্দেশে গত ১৬ ও ১৭ আগস্ট কেন্দ্রের বন্দি আট কিশোরকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এছাড়া পাঁচ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই