যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাত কোটি টাকার চেক জালিয়াতির ঘটনায় পলাতক কর্মচারী আবদুস সালামকে চাকরিচ্যুত করেছে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) তাকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বোর্ডের ৩৮টি চেকে জালিয়াতির মাধ্যমে সাত কোটি টাকা লোপাট করা হয়। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর এ ঘটনাটি প্রথম ধরা পড়ে। এরপর বোর্ড কর্তৃপক্ষ যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করে। তদন্তে নেমেই দুদক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করে। এতে আসামি করা হয় পাঁচজনকে। এরা হলেন, বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলার শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতকে। মামলার কাজ যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন গত ডিসেম্বরে তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হন। এরপর যশোরে দুদকের নতুন উপ-পরিচালক হিসেবে আল-আমিন যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মামলাটির তদন্ত করছেন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বোর্ডের হিসাব সহকারী আবদুস সালামকে শো’কজ করা হয়। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়। গত ৫ মার্চ আব্দুস সালাম শো’কজ নোটিশের জবাবের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া না দেয়ায় ৯ মার্চ ডাকযোগে শো’কজ নোটিশের জবাব পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর কর্মচারী সালামের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার প্রধান ছিলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র। এর আগে বোর্ড কর্মচারী আব্দুস সালাম ২০২১ সালের অক্টোবরে দুই দফায় প্রায় ৩১ লাখ টাকা ফেরত দেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সালামের তালাবদ্ধ কক্ষটি খোলা হয়। এসময় আলমারির তালা ভেঙে জাল চেক, সিল ও প্যাড উদ্ধার হয়।
এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, গত ২৫ জুন আমরা চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করি। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আবদুস সালামের যোগসাজসে সাত কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এছাড়া সে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ। এ কারণে তাকে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করা হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, প্রথমে টাকা লোপাটের ঘটনা আমাদের সহযোগিতায় উদঘাটন হয়েছিলো। তৎকালীন চেয়ারম্যানের বাধার মধ্যেও আমরা দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
বোর্ডের চেক জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্ত আব্দুস সালামের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা শো’কজ নোটিশের জবাব ডাকযোগে ও চেয়ারম্যানের পিএর হাতে পৌঁছে দিয়েছিলাম। জবাবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো।
বিষয়টি নিয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসান হাবীব বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আব্দুস সালামকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া দুদকের মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। আদালতেই এ মামলার চুড়ান্ত ফয়সালা হবে।
খুলনা গেজেট / আ হ আ