যশোরের উপশহর ও ঝিকরগাছা বাজারে শনিবার গভীররাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় অস্ত্রধারী ডাকাতদলের সদস্যরা ৩০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাজারের এক নৈশ প্রহরী নিহত হয়েছেন। র্যাব সদস্যরা তিনটি বিদেশি অস্ত্রসহ তিনজনকে আটক করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, ওইদিন রাত ২টার দিকে ৮/১০ জনের একদল ডাকাত পিকআপযোগে অস্ত্র নিয়ে ঝিকরগাছা উপজেলার রাজাপট্টি বাজারে হানা দেয়। এসময় তারা বাজারে থাকা চারজন নাইটগার্ডকে মারপিট করে টেপ ও গামছা দিয়ে হাত-পা ও মুখ বেধে রাখে। এরপর ঝিকরগাছা অটো ইলেকট্রিকাল ওয়ার্কসপের তালা ভেঙ্গে ২৫টি ট্রাকের ব্যাটারি নিয়ে একটি পিকআপ ভ্যানে তুলে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে নাইটগার্ডদের উদ্ধার করে। তারা অচেতন অবস্থায় নৈশ প্রহরী ঝিকরগাছা ইউনিয়নের বেড়েলা গ্রামের মৃত তুরফান মোড়লের ছেলে আব্দুস সামাদকে (৫৫) ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার সামা সানজিদা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে। আহত অপর তিন নৈশ প্রহরী সুকুমার রায়, ইউসুফ আলী ও কামাল হোসেনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন ভক্ত। তিনি জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।
ঝিকরগাছা অটো ইলেক্ট্রিকাল ওয়ার্কশপের মালিক খায়রুল ইসলাম জানান, তার খোয়া যাওয়া ব্যাটারির মূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা। তিনি জড়িতদের দ্রুত আটকের দাবি জানান। অন্যদিকে নিহতের ছেলে নুরনবী এ হত্যাকান্ডের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
এদিকে, একইদিন রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে যশোর উপশহরের ঢাকারোডে টিটুর ইজিবাইকের শো-রুমে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা দোকানের তালা ভেঙে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ইজিবাইকের ব্যাটারি ও মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি নিয়ে পালিয়ে যায়। কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ডাকাতি নয়, চুরি হয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
এদিকে, র্যাব-৬ যশোরের সদস্যরা ঝিকরগাছা থেকে বিদেশি অস্ত্রসহ তিন জনকে আটক করেছে। ওইরাতেই একটি ব্যাংক ডাকাতির সময় তাদেরকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে বলে র্যাব দাবি করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডার লেঃ নাজিউর রহমান। তিনি বলেন, এ ঘটনার বিস্তারিত পরবর্তীতে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে।
উলেখ্য, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত ২০১৬ সালের ১০ মে রাতে ঝিকরগাছার শিমুলিয়ায় খ্রিস্টান মিশনারি গীর্জায় ডাকাতদল হানা দেয়। ডাকাতরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিশনের হোস্টেলের ছেলেদের এবং নৈশ প্রহরীদের বেঁধে বিভিন্ন ঘরের তালা ভেঙে লুটপাট করে। তারা নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়দের গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হয় ও অপর তিন ডাকাত আহত হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই গভীররাতে ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের রাজাপুর, চাপাতলা, বর্ণী গ্রামের ৫ বাড়িতে সিরিজ ডাকাতি হয়। ৬/৭জনের একদল সশস্ত্র ডাকাত রাজাপুরের টিপু গাজী, চাঁপাতলা গ্রামের মিজানুর রহমান বাদশা, বর্ণি গ্রামের সখিনা বেগম, শরিফুল, আতিয়ারের বাড়িতে ডাকাতি করে। এসব বাড়ি থেকে নগদ কয়েক লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির খবর পেয়ে ওই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে চার ডাকাতকে আটক করে।
এছাড়া, ২০২০ সালের ২৮ আগষ্ট ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলার খ্রিস্টানপাড়ার রানা বিশ্বাসের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাতদল রানা বিশ্বাসের বাড়িতে হানা দিয়ে সোনার গহনা ও নগদ টাকাসহ ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার জানান, ডিবি পুলিশের টিম দুটি স্থানই পরিদর্শন করেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের আটকে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।