একদিন পরেই শনিবার যশোর আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগে থেকেই ছড়িয়ে পড়ে উত্তাপ। বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের ঘটা করে খাওয়া দাওয়াসহ নানা আয়োজন চলে নির্বাচন ঘিরে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার কোন ছাপ নেই বললেই চলে। প্রার্থীদের মধ্যেও নেই আগের মতো জনসংযোগ। প্রধান দু’পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে চার প্রার্থীর প্রচারণা থাকলেও সভাপতি পদে নেই কোনো উত্তেজনা।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে চার প্রার্থী থাকলেও প্রচারণায় রয়েছে দুইজন। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের সাথে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র একদিন। এবার নির্বাচনে ১৩ পদে ২৭ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তবে, ভোটাররা বলছেন, তারা এবার প্রচারণায় বিশ্বাসী না, যোগ্য নেতৃত্বের হাতেই সদস্যরা তুলে দেবেন সমিতির দায়িত্ব।
আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে অংশ নিয়েছেন বর্তমান সভাপতি আবু মোর্তজা ছোট। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। প্রথমে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রচারণা শুরু করেন। পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্যানেল ঘোষণা করা হয়। সেখানে সভাপতি পদে তাকে মনোনীত করে দলের নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া, এ পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থী হয়েছেন সমিতির সাবেক সহসভাপতি খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল।
ভোটাররা বলছেন, বিএনপি ও আওয়ামীলীগপন্থি সংগঠন থেকে প্রতিবছরই সভাপতি পদে পাল্টাপাল্টি প্রার্থী দেয়া হয়। এমনও হয়েছে এক সংগঠন থেকেই একাধিক প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। ভোটারদের দাবি, বর্তমান সভাপতি আবু মোর্তজা ছোটর জনপ্রিয়তার ধারের কাছেও নেই খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল। ছোট নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু মুকুল প্রচারণা চালাচ্ছেন একা একা। ফলে, সভাপতি পদে ভোটের ইমেজ নেই বলে দাবি করছেন ভোটাররা।
এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে এবারের নির্বাচনে চারজন অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ গফুর। তিনি ফোরামের নেতৃবৃন্দের নিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তবে, সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী জুলুও মনোনয়ন কিনেছিলেন। শেষমেষ তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। যার প্রভাব পড়ছে ফোরামে। এবার চমক দেখিয়ে জামায়াত সমর্থিত ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের প্রার্থী হয়েছেন আ.ক.ম মনিরুল ইসলাম। তিনিও সমানে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া, এ পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থী হয়েছেন খালেদ হাসান জিউস। এ পদে আরেক প্রার্থী রয়েছেন হাদিউজ্জামান সোহাগ। সাধারণ সম্পাদক পদে চার প্রার্থীই প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরেসোরে। তবে, কে পরবে জয়ের মুকুট, তা নির্ভর করছে ভোটারদের উপর।
অপর একটি সূত্র বলছে, সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তার লাটাই রয়েছে সভাপতি প্রার্থী আবু মোর্তজা ছোটর হাতে।
নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অন্য প্রার্থীরা হলেন, সহসভাপতি পদে গোলাম মোস্তফা ও আব্দুল লতিফ মোড়ল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নুর আলম পান্নু, সহকারী সম্পাদক পদে বোরহান উদ্দীন সিদ্দিকি, সেলিম রেজা, গ্রন্থগার সম্পাদক পদে ইলিয়াস সাদত (শাহাদৎ) ও সদস্য পদে মুন্সি মনজুরুল মাহমুদ, মৌলুদা পারভীন, মাধবেন্দ্র অধিকারী, এনামুল আহসান টিটুল, তরিকুল ইসলাম।
এবার সাধারণ সম্পাদক বাদেও জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়াস কাউন্সিল সহসভাপতি পদে আলমগীর সিদ্দিক ও মনজুর কাদির আশিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ওয়াজিউর রহমান, গ্রন্থগার সম্পাদক পদে এসএম শাহারিয়ার হক ও সদস্য পদে শফিকুল ইসলাম, রওশনারা খাতুন রুমা ও রফিকুল ইসলামকে প্রার্থী দিয়েছেন। অন্যবার তারা ফোরামের সাথে থাকলেও এবার নিজেরাই প্যানেল করে প্রার্থী দিয়েছেন। এমনকি প্যানেলভুক্ত হয়েই তারা মাঠে রয়েছেন।
এছাড়া, গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফ্রন্টের সমর্থন নিয়ে সহকারী সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন আশরাফুল আলম। স্বতন্ত্র হিসেবে গ্রন্থগার সম্পাদক পদে রুহুল কুদ্দুস তপু ও সদস্য প্রার্থী দৌলতুন নেছা মাঠে রয়েছেন।
এসব বিষয়ে সাধারণ আইনজীবীরা বলছেন, প্রতিবছরই বিএনপি ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত আইনজীবীরা প্যানেলভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এমনও হয় শীর্ষ দু’পদে এক সংগঠন থেকেই একেক পদে দু’জন প্রার্থীও অংশ নেন। যা নিয়ে চলে উত্তেজনা। ভোটের আগে আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষেই শুধু নয়, বিভিন্ন ক্যাফে ক্যান্টিনে চলে গোপনে খাওয়া দাওয়া। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে হাজির হন প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তেমনটি চোখে পড়ছে না আইনজীবীদের।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ইসমত হাসার বলেন, তাদের সকল প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। শনিবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সমিতির ১ নম্বর ভবন মিলনায়তনে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা গেজেট/এএজে