যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দী তিন কিশোর খুনে অভিযুক্ত ৮ কিশোর এখন ১৮ থেকে ২১ বছরের যুবক। দুই থেকে চার বছর আগে ১৫ থেকে ১৭ বছরের বয়সের সনদ দিয়ে এসব শিশুকে উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেই বয়স বিবেচনায় ২০২০ সালে তাদের সবার বয়স ১৮ বছর ছাড়িয়েছে। এ কারণে তাদের কেন্দ্রে থাকার বৈধতা নেই। তিন বন্দী শিশু হত্যা মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে পুলিশি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় উঠে এসেছে।
এসব কারণে চার্জশিট বা শাস্তিই যাই হোক, প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। অভিযুক্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তার পাশপাশি একইভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তাদেরকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
গত ১৩ আগস্ট দুপুরে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পরিকল্পিত মারপিটে খুন হয় বন্দী তিন শিশু। এরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরামানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮) ও বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুরের নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল হোসেন সুজন (১৮)। একই ঘটনায় আহত হয় আরো ১৫ বন্দী কিশোর। ওই হতাহতের ঘটনায় নিহত পারভেজের বাবা রোকা মিয়া ১৪ আগস্ট রাতে থানায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারী ও অজ্ঞাত কয়েক বন্দীকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ এডি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান, শরীর চর্চা শিক্ষক ওমর ফারুক ও কারিগরি শিক্ষক শাহানুর আলমকে আটক করে। তাদের ৫ দিনের রিমান্ডে আনা হলে ওই ৫ কর্মকর্তা তথ্য দেন নির্যাতনে তারা বন্দী ৮ কিশোরকে ব্যবহার করেন।
তারা হচ্ছে, নাটোর সদর উপজেলার কামারদিয়া গ্রামের কামাল জোয়ার্দারের ছেলে মোহাম্মদ আলী (১৭), নাটোরের জোড়মল্লিক উপজেলার সিংড়ার মোক্তার হোসেনের ছেলে হুমাইদ (১৫), কুড়িগ্রামের চাপুভেলাকপার রফিকুল ইসলামের ছেলে রিফাত (১৫), পাবনা বেড়া উপজেলার স্যানাপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মনোয়ার হোসেন (১৪), রাজশাহীর মতিহার উপজেলার কাজলা গ্রামের তজিবরের ছেলে পলাশ ওরফে শিমুল পলাশ (১৮), গাইবান্ধা সদর উপজেলার জোদ্দকড়ি সিং গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে খালিদুর রহমান তুহিন (১৭), পাবনার বেড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ইমরান (১৫) ও আনিস (১৮)। এরপর তাদেরকে শ্যোন অ্যারেস্ট করে পুলিশ। পুলিশি তদন্তে পরিস্কার হয়েছে এ হত্যাকান্ডে ৫ কর্মকর্তার সাথে ওই ৮ বন্দী কিশোর জড়িত ছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত ১৫ কিশোর বন্দী ও স্বাক্ষী তানভীর হোসেন, বাবুল হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, রকিবুল ইসলামের জবানবন্দি থেকে এ বিষয়গুলো পরিস্কার হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সেপেক্টর রোকিবুজ্জামান। তিনি জানতে পেরেছেন, ওই হত্যাকান্ডে ৫ কর্মকর্তা ও ৮ বন্দী সংশ্লিষ্ট। এখন চার্জশিট দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে আটক ৮ বন্দীকে আর শিশু বা কিশোর বলা যাবে না। তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিলেও তিনি শিশু উল্লেখ তরতে পারবেন না। ৮ বন্দীকে পরপর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয় ২০১৫ সালে, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে। ওই সময় তাদের সাথে যে বয়সের সনদ ছিল তাতে কারো বয়স ছিল ১৪, কারো ১৫, কারো ১৭ বা ১৮ বছর। তাদের সনদপত্রের হিসেবে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ৩ কিশোর হত্যাকান্ডের দিন তাদের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই তাদেরকে এখন যুবক বা প্রাপ্ত বয়স্ক বলা যাবে।
এ ব্যাপারে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন বন্দী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁচড়া ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর রোকিবুজ্জামান জানান, মামলার তদন্ত কার্যক্রম একেবারেই শেষের পর্যায়ে। দ্রুতই চার্জশিট দেয়া হবে। হত্যাকান্ড ও আহতের ঘটনায় ৫ কর্মকর্তা ও ৮ কিশোরের সংশ্লিষ্টতা এখন পরিস্কার। তবে ওই আট কিশোর এখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছে। সে হিসেবে তাদের শাস্তির বিধান প্রাপ্ত বয়স্কদের মতই হতে পারে। চার্জশিট চুড়ান্ত করার আগে বয়স নিয়ে শুধু ডাক্তারি পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষা করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট / এমএম