শীতের প্রকোপ বাড়তেই যশোরে লেপ-তোষকের দোকানে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সেইসাথে বেড়েছে তুলা, কাপড় ও মুজুরিসহ সবকিছুর দাম। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ফরমায়েশ অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরি করছেন কারিগররা। তবে এবার রেডিমেট লেপ-তোষক ও ম্যাট্রেসের কদর বেশি বলে দোকানিরা জানিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহে যশোরাঞ্চলে শীত প্রকোপ বেড়েছে। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। রাতে শুরু হয়েছে কনকনে শীত। এ কারণে শহরের লেপ-তোষকের দোকানে মানুষের ভিড় বেড়েছে। এসব দোকানে নতুনের পাশাপাশি কেউ কেউ আবার পুরনো লেপ-তোষকই নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন। এসব দোকানের কারিগররা কেউ তুলা সেট করছেন, তো কেউ তুলায় মোড়ানো কাপড় সেলাই করছেন, এমনিভাবে শহরের অধিকাংশ দোকানে কাজ চলছে সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা বা নয়টা পর্যন্ত।
শহরের গরীবশাহ্ সড়ক, কোর্টের মোড়, জেল রোড, চারখাম্বার মোড়, খয়েরতলা, বাবলাতলা, আরবপুরসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব দোকানে বানানো লেপ-তোষকের পাশাপাশি রেডিমেডও বিক্রি হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে রেডিমেড ফোম এবং ম্যাট্রেস। এবারের শীতে তুলা ও কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে লেপ, তোষক তৈরির খরচও বেড়েছে। প্রতি কেজি তুলাতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং কাপড় প্রতি গজে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এ হিসেবে উপকরণ ও মজুরি মিলিয়ে এ বছর খরচ অনেকটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা। তাই কমেছে অর্ডারের সংখ্যাও। সেই সাথে কম্বল, ফোম ও ম্যাট্রেসের ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে লেপ তোষকের চাহিদা অনেকাংশে কমেছে। তবে যেসব মানুষ পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে চলেন, তারা এখনো নির্ভর করেন বানানো লেপ ও তোষকের ওপর।
এ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন প্রান্তে একশ’র বেশি দোকান রয়েছে। যেসব দোকানে লেপ, তোষক বানানোর পাশাপাশি রেডিমেড লেপ, তোষক, ফোম ও ম্যাট্রেস বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে লেপ বানাতে এক হাজার থেকে ২২শ’ টাকা খরচ পড়ছে। বালিশ বানাতে খরচ পড়ছে একশ’ থেকে একশ’ ৫০ টাকা। তোষক সর্বনিম্ন ৫শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার দুশ’ টাকা। জাজিম দুই হাজার পাঁচশ’ থেকে তিন হাজার ৫শ’ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ম্যাট্রেস চার হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরীবশাহ্ সড়কের দোকানের কারিগর মারিয়া বিশ্বাস বলেন, দশ বছর ধরে এ কাজের সাথে রয়েছি। দিনে ৫০০/৬০০ টাকা মজুরি পাই। আগের দিনে এক হাজার টাকাও মজুরি পেয়েছি। তবে মৌসুমের শুরুতে বর্তমানে কাজের ব্যস্ততা বেশি। আরেকজন কারিগর আলেয়া খাতুনও একই কথা জানান।
ঈদগাহ মোড়ের কারিগর মোহম্মদ আনিস বলেন, বংশ পরম্পরায় তিন পুরুষ ধরে লেপ তোষক বানানোর কাজ করছি। কয়েক বছর আগেও কাস্টমার বেশি ছিল। বর্তমানে ম্যাট্রেস আর ফোমের ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে কাস্টমার কমেছে। তাছাড়া, কাপড় ও তুলার দামও বেড়েছে আগের চেয়ে।
মোল্লাপাড়ার জিনাত রেহানা বলেন, দেশি-বিদেশি বাহারি কম্বল ও ম্যাট্রেসে বাজার সয়লাব হলেও এখনো লেপ-তোষকের বিকল্প নেই। তুলা ও কাপড়ের দাম বাড়লেও যারা বানানো লেপ তোষকে অভ্যস্ত, তাদের কম্বল বা ম্যাট্রেসে চলে না।
বেজপাড়ার আলেয়া খাতুন বলেন, তুলা ও কাপড়ের দাম বেড়েছে। তবু লেপ বানাতে দিয়েছি। বারো বছর আগের লেপের তুলা খানিকটা ড্যাম হয়েছে, তাই এবার পুরনো লেপ নতুন করে বানাতে দিয়েছি।
ঘোপ নওয়াপাড়ার সাগির আহমেদ বলেন, ম্যাট্রেসের বেশি দাম, যা আমাদের মতো মধ্যবিত্তের পোষায় না। ভালো মানের ম্যাট্রেস কিনতে না পারলে তা বেশিদিন যায়ও না। কিন্তু একটা তোষক বা জাজিমে ১৫/২০ বছর পার হয়ে যায়।
ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ বলেন, বানানো লেপ-তোষকে অনেক যত্নের ছোঁয়া থাকে, তাই স্থায়ী হয় বেশি। যার সাথে এখনকার ফোম বা ম্যাট্রেসের তুলনা চলে না।
অপর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, এক শ্রেণির কাস্টমার আছেন যারা এখনো বানানো লেপ, তোষক ও জাজিমের ওপরই নির্ভর করেন। তাদের কারণেই আমাদের ব্যবসাটা এখনো টিকে রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম