যশোরে মিনারুল হত্যা মামলায় ওসমানপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসাথে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার(২ জুন) যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পিপি এম. ইদ্রিস আলী।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফিজুর রহমান সদর উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের চান্দালী মোল্লার ছেলে। নিহত মিনারুল সালতা গ্রামের মৃত সদর আলী মোল্লার ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, দন্ডপ্রাপ্ত হাফিজুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃষি বিভাগে কাজ করতেন। তার ছোট ভাই আব্দুল মান্নানের বন্ধু ছিলেন নিহত মিনারুল। মান্নান বাড়িতে দর্জির কাজ করতেন। মিনারুল দর্জির কাজ শেখার জন্য মান্নানের বাড়িতে যেতেন। এ যাতায়াতের ফলে হাফিজুরের প্রথম স্ত্রী সাবিনার সাথে মিনারুলের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। বিষয়টি একদিন হাফিজুর দেখে ফেলেন। ঘটনার দিন হাফিজুরের কাছে ক্ষমা চান মিনারুল। হাফিজুর এ বিষয়টি আর কাউকে বলেননি। কিন্তু হাফিজুর মনের দুঃখে তার স্ত্রী সাবিনাকে তালাক দেন এবং পরে ডলি নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর কথা কখনো ভুলতে পারেননি হাফিজুর। এরপর নিহত মিনারুল তার গ্রামে বিলকিস নামে অপর এক নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মিনারুল কয়েক বছর হাজতবাসও করেন। এ সব ঘটনায় হাফিজুরের আরো বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সে মিনারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এক পর্যায়ে হাফিজুর মিনারুলের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরমাঝে মিনারুল বিয়ে করেন। মিনারুল তার স্ত্রী সাথীকে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। যা দেখে হাফিজুরের প্রথম স্ত্রীর কথা মনে পড়ে যায়। এ সম্পর্ক তাকে হত্যায় উস্কে দেয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৪ আগষ্ট রাতে প্রথমে মিনারুলের বাড়ির পাশের একটি বাগানে ধারালো অস্ত্র রেখে আসে হাফিজুর। এরপর রাত ১০টার দিকে ফের হাফিজুর তার বাড়িতে যান। এ সময় মিনারুলকে ইশারায় ডেকে বাড়ির পাশে ওই বাগানে নিয়ে যায় হাফিজুর। এরপর ওই দা দিয়ে হাফিজুর মিনারুলকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মিনারুলের বড় ভাই আক্তারুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআই’র এসআই জিয়াউর রহমান। পিবিআই হাফিজুরকে হত্যার নয়দিনের মাথায় আটক করে। একই সাথে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করে। ২৫ আগষ্ট হাফিজুরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম মল্লিক তার জবানবন্দি গ্রহন শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকেই হাফিজুর কারাগারে আটক রয়েছেন। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চার্জশিট জমা দেন। মামলায় ২৩ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার আসামির উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।