খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
  নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১৭
১১ আসামির রিমান্ড আবেদন

যশোরে মাহাফুজ হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তি

যশোর প্রতিনিধি

যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের মাহাফুজুর রহমান হত্যা মামলায় আটক তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা সকলেই ওই প্রতিষ্ঠানের রোগী।

তারা জানিয়েছে, পরিকল্পিতভাবে মাহাফুজুরকে মারপিটে হত্যা করা হয়েছে। খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল কবিরের উপস্থিতিতেই এ নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। আরেক পরিচালক মাসুদ করিমও বিষয়টি জানতেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হোসাইন, মাহাদী হাসান ও মামুনুর রহমানের পৃথক তিনটি আদালতে তিনজনের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া অপর ১১ জনের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত আগামি ২৭ মে রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

হত্যা মামলায় অভিযুক্ত রিয়াদ, রানা ও শাহিন জানান, মাহফুজুর রহমান ছিলেন উচ্ছৃঙ্খল। তার কার্যকলাপে কর্তৃপক্ষ অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মারপিট করা হয়েছে। পরে তার নাকে মুখে পানি ঢালা হয়। মারপিটের পর তাকে নাস্তা করানো হয়েছিল। এরপর তাকে তার বেডে রেখে আসা হয়। পরে সে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, মাহফুজুরকে যখন প্রথম এ কেন্দ্রে প্রথম ভর্তি করা হয়, তখনও তাকে মারধরের স্বীকার হতে হয়েছিল। আদালত সূত্র জানায়, তিন আসামি রিয়াদ, রানা ও শাহিন আদালতে স্বীকার করেছে তারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ও পরিচালকদের নির্দেশেই তাকে মারপিট করেছে।

এদিকে, যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে মাহাফুজের হত্যার পর বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ উঠেছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল কবির তুহিন নিজেই মাদকসেবী। তিনি দীর্ঘদিন যশোরের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে তিনি নিজেই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মালিক বনে যান। এ কেন্দ্র খুলে তিনি অবৈধভাবে বাণিজ্য শুরু করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে বহিরাগতের আড্ডাখানা বসাতেন পরিচালক তুহিন। তার বিরুদ্ধে নারী ঘটিত একাধিক অভিযোগও রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠান চলছে। একটি পক্ষকে ম্যানেজ করে কর্তৃপক্ষ অবৈধ এ কারবার চালাতেন।
এদিকে, ম্হফুজুর হত্যার ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ ১৪ জনের নামে মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকেই আটক করে। একই সাথে সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র দেখে ঘটনা নিশ্চিত হয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।

আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়া আসামিরা হলো, চৌগাছা উপজেলার বিশ্বাসপাড়া গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে রিয়াদ, শহরের নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার আব্দুর রশিদ মিয়াজীর ছেলে রেজাউল করিম রানা ও ঝিনাইদহর কোটচাদপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের সাবদার রহমানের ছেলে শাহিনুর রহমান।

পুলিশের রিমান্ডের আবেদন জানানো অন্য আসামিরা হলেন, প্রতিষ্ঠানের দুই পরিচালক বারান্দী মোল্লাপাড়ার আবুল হাসেমের ছেলে মাসুদ করিম ও বারান্দীপাড়া বটতলার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আশরাফুল কবির, ঝিনাইদহর কোটচাদপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে আরিফুজ্জামান, শহরের কাজীপাড়ার কামরুজ্জামানের ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান, আরবপুর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে অহিদুল ইসলাম, বকচর হুশতলার আবুল হোসেনের ছেলে আল শাহরিয়ার রোকন, বেনাপোল পোর্ট থানার শাখারীপোতা গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন, অভয়নগর উপজেলার বুইকারা গ্রামের আসর আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার এসএমজি মুক্তাদির ছেলে এসএস সাগর আজিজ, শেখহাটি হাইকোর্ট মোড়ের মৃত ফজর আলীর ছেলে নুর ইসলাম, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বামখালী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান সাগর।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রোকিবুজ্জামান বলেন, মাহফুজুর হত্যাকান্ডে তিনজন দায় স্বীকার করেছে। অন্যদেরও রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য আসতে পারে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, নিহত মাহফুজুর রহমান (২২) চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগর উপজেলার মনিরুজ্জামানের ছেলে। গত ২৬ এপ্রিল তিনি যশোর মাদকাসক্ত ও নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হন।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!